ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১ আশ্বিন ১৪৩২
দুই টাকার নিচে শেয়ার, বিনিয়োগকারীদের কষ্টের আর্তনাদ

হাসান মাহমুদ ফারাবী
রিপোর্টার

হাসান মাহমুদ ফারাবী: দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এখন এমন দৃশ্য যেন বিনিয়োগকারীর স্বপ্নকে কেঁটে ফেলে। বেশ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার দুই টাকার নিচে নামিয়ে পড়েছে—যেখানে একসময় অভিহিত মূল্য ১০ টাকার বেশি বা তারও ওপরে উড়তো। সেই গৌরবময় দিনগুলো এখন শুধু স্মৃতির ভাঁজে রয়ে গেছে। আজ এই শেয়ারগুলো কেবল পেনি স্টকের তালিকায় তালসাপটে লুকিয়ে আছে, আর বিনিয়োগকারীর চোখে অশ্রুর ধারা, হৃদয়ে ব্যথার অমোঘ ছাপ রেখে যাচ্ছে।
একসময় বিনিয়োগকারীর স্বপ্ন ও আশা জ্বালানো শেয়ারগুলো আজ শুধুই হতাশার প্রতীক। ফারইস্ট ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, ফাস ফাইন্যান্স, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক—এসব শেয়ারের দাম এখন টলোমলো অবস্থায়। কোথাও ১ টাকা ২০ পয়সা, কোথাও ১ টাকা ৫০ পয়সা বা দুই টাকার কিনারায়, যেখানে কয়েক বছর আগে এসব শেয়ার ১৫–২০ টাকার ওপরে উড়ত। সেই দিনগুলোর গৌরব আজ শুধু স্মৃতিতে রয়ে গেছে, আর বিনিয়োগকারীর চোখে অশ্রু ঝরে, মনে দগ্ধ ব্যথার ছাপ রেখে।
বিনিয়োগকারীদের জন্য এ যেন দুঃস্বপ্ন। যারা ১০ টাকা বা তার ওপরে শেয়ারগুলো কিনেছেন, আজ তারা দেখছেন সেই শেয়ারের বাজারদর নামতে নামতে দাঁড়িয়েছে ১-২ টাকায়। মূলধনের প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ উবে গেছে। অনেক বিনিয়োগকারী বলছেন, “আমরা জীবনের সঞ্চয় ঢেলেছিলাম, এখন সেটা কাগজে লিখা সংখ্যা ছাড়া আর কিছু নয়।”
এই ক্ষতির বোঝা কেবল কাগজের অঙ্ক নয়, বাস্তব জীবনের কষ্টও বয়ে আনছে। কারও সন্তানের পড়াশোনার খরচ, কারও বাড়ি তৈরির স্বপ্ন, আবার কারও ঋণ পরিশোধের পরিকল্পনা—সব ভেঙে পড়েছে লোকসানের বোঝায়। বিনিয়োগকারীদের চোখেমুখে এখন শুধু অসহায়তার ছাপ।
বিশ্লেষকদের মতে, এসব কোম্পানির মূল সমস্যাগুলো দীর্ঘদিনের। দুর্বল আর্থিক ফলাফল, ঋণের বোঝা, ব্যবস্থাপনার অনিয়ম আর কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়ার কারণে শেয়ারের দাম ক্রমেই কমেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বাজারে গোষ্ঠীগত কারসাজি। ফলে যেসব শেয়ার এক সময় আশার আলো জ্বালাতো, আজ সেগুলো ধুঁকতে ধুঁকতে নাম লিখিয়েছে দুই টাকার নিচে।
ডিএসই সম্প্রতি কয়েকটি কোম্পানিকে ‘বন্ধ বা কার্যক্রম স্থবির’ হিসেবে সতর্কবার্তা জারি করেছে। ছোট বিনিয়োগকারীরা এই শেয়ারগুলোতে ভরসা রেখেছিলেন—ভেবেছিলেন, হয়তো একদিন আবার সব কিছু ঠিক হবে। কিন্তু বাস্তবতা ছিল আরও নির্মম। বাজারের এই নিষ্ঠুর মোড় বিনিয়োগকারীর স্বপ্নের উপর থোকা বসিয়েছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পেনি শেয়ারে বিনিয়োগ এখন প্রায় আত্মঘাতী। কারণ কোম্পানিগুলোর মৌলিক ভিত্তি দুর্বল হলে, কোনো গুজব বা স্বল্পমেয়াদি উত্থান বিনিয়োগকারীর ক্ষতি পূরণ করতে পারে না; বরং লোকসানই আরও বাড়িয়ে দেয়। চোখের সামনেই অনেক পরিবার কষ্টে নিঃশ্বাস ফেলছে, আর হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে ক্ষতির বোঝা তোলার চেষ্টা করতে করতে।
উপরন্তু, ব্যাংক ও আর্থিক খাতেও দারুণ অস্থিরতা বিরাজ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ৫টি ইসলামী ব্যাংক একীভূত করে একটি বড় ইসলামী ব্যাংক শুরু করতে যাচ্ছে, একই সঙ্গে ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা এসেছে। এর প্রভাব শেয়ারবাজারে সরাসরি পড়েছে—অনেক শেয়ার দুই টাকার নিচে নেমেছে, আর কিছু শেয়ার দু’টাকার আশেপাশে নিস্তেজভাবে লেনদেন হচ্ছে।
এএসএম/
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- এশিয়া কাপ ২০২৫: বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান,সরাসরি দেখবেন যেভাবে
- এশিয়া কাপ: পাকিস্তান বনাম শ্রীলঙ্কা, সরাসরি দেখবেন যেভাবে
- উৎপাদন বন্ধ ৩০ কোম্পানির তালিকা প্রকাশ করেছে ডিএসই
- তালিকাচ্যুত হচ্ছে পাঁচ ব্যাংক, বলির পাঠা শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা!
- শেয়ারবাজারের ১২ কোম্পানির ২ হাজার কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগ
- সিটি ব্যাংক পোর্টফোলিও ম্যানেজারের শেয়ার জালিয়াতি, তদন্তে বিএসইসি
- যেভাবে পাঁচ ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে
- নতুন দিগন্তে বেক্সিমকো, শেয়ারবাজারে আশার আলো
- এনবিআর-এর ক্যাশ গেইন প্রতিক্রিয়া অতিরঞ্জিত: আনিসুজ্জামান চৌধুরী
- বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে শেয়ারবাজারের ৬ কোম্পানিতে
- চলতি সপ্তাহে ঘোষণা আসছে ৫ কোম্পানির ডিভিডেন্ড
- ডিভিডেন্ড ঘোষণার তারিখ জানাল তিন কোম্পানি
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে মুন্নু সিরামিক
- শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর নতুন আবেদন
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে এনভয় টেক্সটাইল