ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০ আশ্বিন ১৪৩২

আর্থিক খাতে অশনি সংকেত: বন্ধ হচ্ছে ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান

হাসান মাহমুদ ফারাবী
হাসান মাহমুদ ফারাবী

রিপোর্টার

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৫ ২১:২৯:০৫

আর্থিক খাতে অশনি সংকেত: বন্ধ হচ্ছে ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান

হাসান মাহমুদ ফারাবী: দেশের নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) খাত ক্রমশ গভীর সংকটে নিমজ্জিত হচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন—প্রথম ছয় মাসে এখাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে এখাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ২৭ হাজার কোটি টাকায়, যা বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৩৬ শতাংশ।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো—খাতটির ২০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের হার ৫০ থেকে ৯৯ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, এ প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যত দেউলিয়া অবস্থায় রয়েছে।

উচ্চ খেলাপি ঋণ ও গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় গত মাসে এসব প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দিয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ৯টি প্রতিষ্ঠানের ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা সন্তোষজনক না হওয়ায় সেগুলো বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—এফএএস ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, আভিভা ফাইন্যান্স, প্রিমিয়ার লিজিং, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স এবং প্রাইম ফাইন্যান্স। এদের খেলাপি ঋণ বর্তমানে ৮০ থেকে ৯৯ শতাংশ পর্যায়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক ও সহকারী মুখপাত্র মো. শাহরিয়ার সিদ্দিকী জানান, আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে বিষয়টি এখনও পর্যালোচনায় রয়েছে। সরকার থেকে অর্থ বরাদ্দ আসার পর চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু হবে। তিনি বলেন, “যা কিছুই করা হবে, সবই হবে আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য।”

বন্ধের পথে থাকা ৯টির বাইরে আরও ১৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে আছে—সিভিসি ফাইন্যান্স, বে লিজিং, ইসলামিক ফাইন্যান্স, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স, হজ ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, আইআইডিএফসি, উত্তরা ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ইউনিয়ন ক্যাপিটালসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান। এদের খেলাপি ঋণের হার ৫০ শতাংশের ওপরে।

অধিকাংশ এনবিএফআই নতুন ঋণ বিতরণ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। গ্রাহকরা আমানত ফেরত চাইলে প্রতিষ্ঠানগুলো সেই দায়ও পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে বাজারে এখাতের প্রতি আস্থা ভীষণভাবে নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সংকট দীর্ঘদিন চলতে থাকলে শুধু আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয়, সামগ্রিক আর্থিক খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এএসএম/

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত