পাঁচ ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা ফেরতে চালু হচ্ছে পেমেন্ট স্কিম

মোবারক হোসেন: মার্জার হওয়া পাঁচ ব্যাংকের আমানতকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং হঠাৎ টাকা উত্তোলনের প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন একটি পেমেন্ট স্কিম চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে একীভূত হওয়া ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের জন্য বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পাঁচ ব্যাংকের গ্রাহকরা স্বাভাবিক লেনদেনে কোনো ধরনের সমস্যায় পড়বেন না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আমানত ফেরতের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের দুটি ভাগে ভাগ করা হবে। যাদের আমানত সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত, তারা বিমার আওতায় দ্রুত তাদের অর্থ ফেরত পাবেন। তবে একই গ্রাহকের একাধিক ব্যাংক হিসাব থাকলেও সম্মিলিতভাবে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকাই বিমাকৃত থাকবে।

অন্যদিকে, যেসব গ্রাহকের আমানত ২ লাখ টাকার বেশি, তাদের অর্থ ধাপে ধাপে ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদিও এখনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ঠিক হয়নি। তবে ফেরতের সময় মূল টাকার সঙ্গে বার্ষিক ৪ শতাংশ হারে রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে বর্তমানে চালু থাকা সব আমানত স্কিম বাতিল হয়ে যাবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ব্যক্তি আমানতকারীদের ফেরত প্রদানে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের ক্ষেত্রে নগদ অর্থের পরিবর্তে নবগঠিত ব্যাংকের শেয়ার দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আমানত সুরক্ষা আইনের খসড়া সংশোধনী অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা বিমার আওতায় ফেরত দেওয়া হবে এবং এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ ২০২৫ অনুসারে, ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল হলে দুই মাসের মধ্যেই বিমাকৃত অর্থ ফেরত দিতে হবে। এর বাইরে থাকা আমানত ধাপে ধাপে ফেরত দেওয়া হবে। এ সময় ৪ শতাংশ হারে রিটার্ন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। একইসঙ্গে সব বিদ্যমান আমানত স্কিম বাতিল হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেছেন, আমানতকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। মার্জারকৃত ব্যাংকগুলো সাময়িকভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, ফলে গ্রাহকদের অর্থ সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবে। এজন্য প্রতিটি ব্যাংকে একজন করে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে, যারা কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্সের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনো গ্রাহকের যদি পাঁচটি ব্যাংকেই একাধিক হিসাব থাকে, সেগুলো একত্রে একটি হিসাব হিসেবে বিবেচিত হবে। সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা বিমার আওতায় ফেরত দেওয়া হবে, এর বেশি অংশ ধাপে ধাপে ফেরত আসবে। তবে ঋণগ্রহীতাদের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হবে না—তাদের কিস্তি নিয়মমতো পরিশোধ করতে হবে, আর খেলাপি হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংক হলো—এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। এসব ব্যাংক মিলে নতুন একটি প্রতিষ্ঠান গঠিত হবে, যার সম্ভাব্য নাম ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’। নতুন ব্যাংকের মোট সম্পদ দাঁড়াবে প্রায় ২.২০ লাখ কোটি টাকা, আর পরিশোধিত মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি আসবে সরকার থেকে, ১০ হাজার কোটি ডিপোজিট ইন্সুরেন্স ফান্ড থেকে এবং বাকি ৫ হাজার কোটি টাকা আন্তর্জাতিক সংস্থা—আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এডিবি থেকে আসতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত এসব অর্থ পরিশোধ করতে হবে দেশের করদাতাদের মাধ্যমেই।

প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের নগদ অর্থের পরিবর্তে নতুন ব্যাংকের শেয়ার দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে ঋণগ্রহীতাদের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় থাকছে না, নিয়ম অনুযায়ী তাদের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। সম্পূর্ণ মার্জার প্রক্রিয়া শেষ হতে তিন বছর সময় লাগতে পারে।

এই পুরো উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হলো ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষিত করা। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ অনুযায়ী নিযুক্ত প্রশাসকরা প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহীদের বদলাতে পারবেন, এমনকি চেয়ারম্যান বা পরিচালকের দায়িত্বও গ্রহণ করতে পারবেন। বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে প্রশাসকদের শরীয়াহ-ভিত্তিক ফাইন্যান্স বিষয়ে অভিজ্ঞ হতে হবে, অথবা এ ধরনের বিশেষজ্ঞ নিয়োগের অনুমতি থাকবে। নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসকদের নাম জাতীয় দৈনিক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে, যাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়।

এএসএম/