ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২

ভারত বিরোধিতার কারণে নেপালের প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন ওলি

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১০ ২২:৫২:০৮

ভারত বিরোধিতার কারণে নেপালের প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন ওলি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নেপালে সম্প্রতি এক ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে, যা একদিকে সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির ভারত বিরোধিতার ফল এবং অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের সরকারবিরোধী সহিংস বিক্ষোভের কারণে চরম আকার ধারণ করেছে। ওলি অভিযোগ করেছেন, লিপুলেখ অঞ্চল এবং অযোধ্যায় দেবতা রামের জন্মস্থান নিয়ে ভারতের স্পর্শকাতর বিষয়গুলিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর কারণেই তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন। তার পদত্যাগের একদিন পরই দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া জেন-জির সহিংস বিক্ষোভের মুখে একাধিক মন্ত্রীকে হেলিকপ্টারের রশিতে ঝুলে প্রাণ বাঁচাতে দেখা গেছে।

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) জেন-জির তীব্র বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন কেপি শর্মা ওলি। গুঞ্জন উঠেছিল তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, তবে তিনি নেপালের সেনাবাহিনীর শিবপুরি ব্যারাকে অবস্থান করছেন। বুধবার নিজ দলের মহাসচিবের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ওলি তার প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানোর জন্য সরাসরি ভারতকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, যদি তিনি লিপুলেখ অঞ্চল এবং অযোধ্যা ও দেবতা রামের জন্মস্থান নিয়ে প্রশ্ন না তুলতেন, তাহলে হয়তো তিনি ক্ষমতায় থাকতে পারতেন। ওলি ২০২০ সালের জুলাইয়ে দাবি করেছিলেন যে দেবতা রাম ভারতে নয়, নেপালে জন্ম নিয়েছিলেন এবং রামের অযোধ্যা রাজ্য নেপালের পূর্ব বীরগঞ্জে অবস্থিত। তিনি ভারতের অযোধ্যাকে 'ভুয়া' বলে মন্তব্য করেন, যা ভারতে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল।

লিপুলেখ গিরিপথকে কেন্দ্র করে ভারত ও নেপালের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। ১৮১৬ সালের সুগৌলি চুক্তি অনুযায়ী কালী নদীর উৎপত্তিস্থলকে সীমান্ত নির্ধারণ করা হলেও, এর সঠিক উৎপত্তিস্থল নিয়ে দুই দেশের ভিন্ন ভিন্ন দাবি রয়েছে। ওলির সরকার এই অঞ্চলে কঠোর অবস্থান নিয়েছিল এবং লিপুলেখ, লিম্পিয়াধুড়া ও কালাপানিকে নেপালের অবিচ্ছেদ্য অংশ ঘোষণা করেছিল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া বিক্ষোভ দ্রুত সহিংসতায় রূপ নেয় মঙ্গলবার। রাজধানী কাঠমান্ডুতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষোভকারীরা। এই সহিংস আন্দোলনের সময় নেপালের একাধিক মন্ত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে উত্তেজিত জনতার মারধরের বেশ কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্টসহ সরকারের অনেক মন্ত্রী ও এমপির বাসভবনে হামলা চালায়। এ সময় বাসাবাড়িতে আটকে পড়া সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা, মন্ত্রী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সামরিক হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার করা হয়। একটি আলোচিত ভিডিওতে দেখা যায়, মন্ত্রী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা সেনা হেলিকপ্টারের রশিতে ঝুলে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।

বিক্ষোভকারীরা দেশটির তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী পৃথী সুব্বা গুরুঙ্গের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী বিষ্ণু পাউডেলের বাসভবনে ভাঙচুর, নেপালের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের গভর্নর বিশ্ব পাউডেল ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখকের বাড়িতে হামলা চালায়। অর্থমন্ত্রী বিষ্ণু পাউডেলকে রাস্তায় ধাওয়া দিয়ে মারধর করার এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরজু রানা দেউবা ও তার স্বামী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবাকে মারপিট করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। রক্তাক্ত শের বাহাদুর দেউবাকে পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারির পাশাপাশি সেনাবাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে এবং মানুষকে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এসপি

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত