ঢাকা, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২
আতঙ্কে ১০ লাখ পোশাক শ্রমিক, কর্মহীন হওয়ার শঙ্কা

যুক্তরাষ্ট্রের 'রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ' বা পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে দেশের তৈরি পোশাক খাত (আরএমজি)। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ কার্যকর হলে দেশের প্রায় সহস্রাধিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানার অন্তত ১০ লাখ শ্রমিক কর্মহীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাড়তি এই শুল্কহার বাংলাদেশকে বৈশ্বিক বাজারে পিছিয়ে দেবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক এখনো কাঙ্ক্ষিত ফল দেয়নি। আলোচনার অগ্রগতি না থাকায় উদ্যোক্তাদের মধ্যে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। অনেকেই মনে করছেন যদি ১ আগস্টের মধ্যে কোনো অনুকূল সমঝোতায় পৌঁছানো না যায় তবে ৭ আগস্ট থেকে রপ্তানি পণ্যে নতুন শুল্ক কার্যকর হবে। এর ফলে অনেক কারখানা কার্যাদেশ হারাবে এবং বেকার হয়ে পড়বেন বিপুলসংখ্যক শ্রমিক।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, পাল্টা শুল্কের কারণে তৈরি হয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে লবিইস্ট নিয়োগের পরামর্শ দিলেও সরকারের পক্ষ থেকে এখনও সে বিষয়ে আগ্রহ দেখা যায়নি। আগামী সপ্তাহে তৃতীয় দফায় বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের মতে, শুল্ক আলোচনার বিষয়টি শুধু বাণিজ্যিক নয়, এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। অনন্ত গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইনামুল হক খান বলেন, ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে ৭ জুলাইয়ের পর যাঁরা পণ্য রপ্তানি করেছেন তাঁদের ক্রেতারা ঝুঁকিতে রয়েছেন।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিন বলেন, সময়মতো দর-কষাকষি করে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় শুল্কহার কমাতে না পারলে মার্কিন বাজার হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। তিনি জানান, ৯ এপ্রিল থেকে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ২২ শতাংশ কমেছে। মে মাসে পোশাক আমদানি দাঁড়ায় ৫২ কোটি ৩২ লাখ ডলারে যা এপ্রিলের তুলনায় ২৮ শতাংশ কম।
যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে। অথচ একই সময়ে ভিয়েতনাম ২০ শতাংশ এবং পাকিস্তান ১০-২৯ শতাংশ শুল্ক সুবিধা পাচ্ছে বা আলোচনার মাধ্যমে তা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। ফলে বাংলাদেশকে দ্রুত একটি কার্যকর দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে পৌঁছাতে হবে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ৮৪০ কোটি ডলার যার মধ্যে ৭৩৪ কোটি ডলার ছিল তৈরি পোশাক। বিপরীতে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ২২০ কোটি ডলারের পণ্য।
বিজিএমইএর তথ্যমতে, বছরে ৫ মিলিয়ন ডলারের কম রপ্তানি করে এমন ৪৫০টি ছোট কারখানায় প্রায় সোয়া তিন লাখ শ্রমিক কাজ করেন। পাশাপাশি ৫-২০ মিলিয়ন ডলার রপ্তানিকারী ৭০০টি মাঝারি কারখানায় কাজ করেন প্রায় সাত লাখ শ্রমিক। এই এক হাজার ১০০টির বেশি কারখানা এখন বড় ধরনের ঝুঁকিতে।
সরকারও এ সংকট উত্তরণে নানা কৌশল নিয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ‘জিটুজি’ চুক্তিতে তিন লাখ টন গম আমদানি, বোয়িং বিমান কেনা এবং তুলা, গ্যাস টারবাইন, চিকিৎসা সরঞ্জাম ইত্যাদির আমদানিতে শুল্ক সমন্বয়ের চিন্তাভাবনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ রপ্তানি করে মাত্র ০.২৫ শতাংশ পণ্য অথচ ৬.২ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত থাকার পরও ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এটি ১৪টি লক্ষ্যভুক্ত দেশের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ শুল্কহার। অথচ বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক থেকে। এতে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়োজিত তাদের বেশির ভাগই নারী।
এই শুল্ক আরোপ শুধু রপ্তানিকে নয়, দেশের সামগ্রিক শ্রমবাজার, দারিদ্র্য পরিস্থিতি, পরিবারিক আয় ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকেও হুমকির মুখে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। সময়মতো কার্যকর উদ্যোগ না নিলে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব হতে পারে ভয়াবহ।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- চলতি সপ্তাহে বেক্সিমকোর ফ্লোর প্রাইস ওঠার সম্ভাবনা
- শেয়ারবাজারে তানিয়া শারমিন ও মাহবুব মজুমদার ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ
- শেয়ারবাজারের ৩ প্রতিষ্ঠানের ২৯৬ কোটি টাকা মানি লন্ডারিং
- শেয়ারের অস্বাভাবিক দামের জন্য ডিএসইর সতর্কবার্তা
- শিক্ষার্থীদের আলোকিত ভবিষ্যত গড়তে পাশে থাকবে ঢাবি অ্যালামনাই
- ১০ লাখ শেয়ার কেনার ঘোষণা তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তার
- ইপিএস ঘোষণার তারিখ জানাল দুই কোম্পানি
- ঢাবির ২০১৮-১৯ সেশনের অছাত্ররা হতে পারবেন না ভোটার-প্রার্থী
- ১৬ জুলাই সরকারি ছুটি কি-না? যা জানা যাচ্ছে
- ঢাবি অ্যালামনাই ও নিউ হরাইজন কানাডিয়ান স্কুলের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর
- শোক সংবাদ পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন পলক
- জুলাই স্মৃতি জাদুঘর: টেন্ডার ছাড়াই ১১১ কোটি টাকার কাজ পেল দুই প্রতিষ্ঠান
- ডিভিডেন্ড পেয়েছে চার কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- সর্বোচ্চ আগ্রহের তালিকায় ৪ খাতের শেয়ার
- ঢাবির জিয়া হলে ‘ক্যারিয়ার টক’ অনুষ্ঠিত