ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২
১৫ জুলাই: কোটা ইস্যুতে উত্তাল ঢাবি
.jpg)
২০২৪ সালের ১৫ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ দফায় দফায় হামলা চালায়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
ছাত্রলীগের ওই হামলায় সারাদেশে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এর মধ্যে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আহত হন ২৯৭ জন শিক্ষার্থী। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। চিকিংসারত আবস্থায় হাসপাতালে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ।
আগের দিন ১৪ জুলাই বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের রাজাকারের নাতিপুতি বলে কটূক্তি করেন। এ কটূক্তির প্রতিবাদে রাতে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। রাত ১১টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের হলসহ প্রায় প্রতিটি আবাসিক হল থেকে তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার স্লোগানে মিছিল নিয়ে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হন শত শত শিক্ষার্থী।
পরের দিন ১৫ জুলাই ধানমন্ডিতে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, তার আত্মস্বীকৃত রাজাকার, গত রাতে নিজেদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ মানসিকতার প্রকাশ ঘটিয়েছে। এর জবাব ছাত্রলীগই দেবে।
সেদিন কোটা সংস্কার আন্দোলনে যারা নিজেদের রাজাকার বলে স্লোগান দিয়েছে, তাদের শেষ দেখে ছাড়বেন বলে হুমকি দেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
এই দুইজনের এমন বক্তব্যের পর দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর স্বশস্ত্র হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
২০২৪ সালের ১৫ জুলাই দুপুর ১২টার পর রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, এর অধিভুক্ত সাত কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ-সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হন। বিকেল ৩টার দিকে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল এলাকায় গেলে বিজয় একাত্তর হলের সামনে ছাত্রলীগের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপর আশপাশের হল ও মধুর ক্যান্টিন থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এসে মল চত্বরে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়।
হামলার মুখে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে ভিসি চত্বরের দিকে সরে যেতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা রড, হকিস্টিক, রামদা-সহ বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে আবারও হামলা চালায়। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করলেও সেখানেও তাদের মারধর করা হয়।
ছাত্রলীগের হামলায় প্রায় তিনশ শিক্ষার্থী আহত হন, যাদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকরাও রয়েছেন। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু সন্ধ্যায় সেখানেও হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। একই সময়ে শহীদুল্লাহ হল এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ জানান, সারা দেশে অন্তত পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী হামলার শিকার হয়েছেন। আহতদের হাসপাতালে নিয়েও নিরাপদ রাখা যায়নি। পুলিশও কোনো সহায়তা করেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ হামলাকে পরিকল্পিত উল্লেখ করে তীব্র প্রতিবাদ জানান।
এই ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের প্রাধ্যক্ষদের নিয়ে বৈঠক করেন উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রাধ্যক্ষরা রাতভর হলে অবস্থান করবেন।
সংঘর্ষের পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে রাত ১০টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মোবাইল তল্লাশি ও মারধর করেন। স্যার এ এফ রহমান, বিজয় একাত্তর, মাস্টারদা সূর্যসেন ও শহীদ সার্জেন্ট জহরুল হক হলে এসব ঘটনা ঘটে। আন্দোলনে সম্পৃক্ততা সন্দেহে শিক্ষার্থীদের উপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়।
ইডেন মহিলা কলেজেও আন্দোলনে যেতে চাওয়া শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়া হয়। ছাত্রলীগ নেত্রীরা গেট তালাবদ্ধ করে রাখেন। তবু শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তালা ভেঙে রাজু ভাস্কর্যের সামনে মিছিলে অংশ নেন।
এদিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও পুলিশি বাধা পেরিয়ে ঢাবিতে গিয়ে বিক্ষোভে যোগ দেন। এর আগে জবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীদের মিছিলে ছাত্রলীগ দফায় দফায় হামলা চালায়। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হন। এর আগের রাতেও সেখানে শতাধিক বহিরাগত নিয়ে ছাত্রলীগ হামলা চালায়, যাতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন এবং পরে তারা উপাচার্যের বাসভবনে আশ্রয় নেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর শহীদ মিনার ও কাটাপাহাড় এলাকায় দুই দফায় হামলা চালানো হয়। এতে ১০ জন আহত হন। একইদিন চট্টগ্রাম শহরের অন্যত্রও ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে সাংবাদিক ও পুলিশ সদস্যসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে বাম ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা চালায় ছাত্রলীগ। যশোরের এম এম কলেজে আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাদের শাস্তি দাবি করে প্রক্টর বরাবর স্মারকলিপি দেন।
রাজধানীর নতুনবাজার ও কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। এছাড়া হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুয়েটেও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেন।
১৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের রাজাকার স্লোগান দেওয়াকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন এবং বলেন, নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জা লাগে না। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ একে রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান বলেন, আর শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল আন্দোলনকারীদের এ যুগের রাজাকার বলে আখ্যা দেন।
এই ঘটনার প্রতিবাদে ১৬ জুলাই (মঙ্গলবার) বিকেল ৩টায় দেশব্যাপী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এদিন রাতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন এবং এর জন্য দুঃখ প্রকাশের আহ্বান জানান।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- চলতি সপ্তাহে বেক্সিমকোর ফ্লোর প্রাইস ওঠার সম্ভাবনা
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তার জালে তিন কোম্পানি
- শেয়ারবাজারে তানিয়া শারমিন ও মাহবুব মজুমদার ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ
- চ্যাটজিপিটি ব্যবহারে ভয়াবহ বিপদ, গবেষণায় উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য
- শেয়ারবাজারের ৩ প্রতিষ্ঠানের ২৯৬ কোটি টাকা মানি লন্ডারিং
- শেয়ারের অস্বাভাবিক দামের জন্য ডিএসইর সতর্কবার্তা
- শিক্ষার্থীদের আলোকিত ভবিষ্যত গড়তে পাশে থাকবে ঢাবি অ্যালামনাই
- ১০ লাখ শেয়ার কেনার ঘোষণা তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তার
- ঢাবির ২০১৮-১৯ সেশনের অছাত্ররা হতে পারবেন না ভোটার-প্রার্থী
- ইপিএস ঘোষণার তারিখ জানাল দুই কোম্পানি
- শোক সংবাদ পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন পলক
- ডিভিডেন্ড পেয়েছে চার কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- ১৫ দিনে ১৭ প্রতিষ্ঠানে ২০ শতাংশের বেশি মুনাফা
- সর্বোচ্চ আগ্রহের তালিকায় ৪ খাতের শেয়ার
- ১৬ জুলাই সরকারি ছুটি কি-না? যা জানা যাচ্ছে