ঢাকা, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

চাকরি হারাচ্ছেন পুলিশের উচ্চপদস্থ দুই ডজন কর্মকর্তা

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ জুলাই ১৩ ০৫:৪৬:২৩
চাকরি হারাচ্ছেন পুলিশের উচ্চপদস্থ দুই ডজন কর্মকর্তা

পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত পুলিশের দুই ডজনের বেশি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এখন চাকরি হারানোর মুখে। কারণ তারা দীর্ঘদিন ধরে অনুমতি ছাড়াই কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তালিকায় রয়েছেন ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম এবং ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের মতো আলোচিত কর্মকর্তারা। এছাড়াও তালিকায় ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি, এসপি ও অতিরিক্ত এসপি পদমর্যাদার আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন।

পুলিশ সদর দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র বলেছে, বিনা অনুমতিতে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত এই পুলিশ কর্মকর্তারা মূলত আত্মগোপনে রয়েছেন। তাঁদের কয়েকজন ইতিমধ্যে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন বলেও শোনা যাচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিনা অনুমতিতে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম। তিনি গত বছরের ২৬ আগস্ট থেকে অনুপস্থিত। ডিএমপির ডিবির সাবেক আলোচিত-সমালোচিত প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ, ডিএমপির সাবেক তিন যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, এস এম মেহেদী হাসান ও রিফাত রহমান শামীম ৬ আগস্ট থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। সাবেক যুগ্ম কমিশনার সঞ্জিত কুমার রায় ২২ আগস্ট থেকে, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী ২৬ আগস্ট থেকে অনুপস্থিত।

পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদার ৬ আগস্ট থেকে, অতিরিক্ত ডিআইজি মো. জায়েদুল আলম ৪ নভেম্বর থেকে, এপিবিএনের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে, রাজশাহী রেঞ্জ পুলিশের এসপি আয়েশা সিদ্দিকা ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে, রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি শ্যামল কুমার মুখার্জি, চট্টগ্রাম রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি নুর আলম মিনা ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে অনুপস্থিত। নারায়ণগঞ্জের সাবেক এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল ও গোয়েন্দা পুলিশের এসপি এটিইউ শাখার মোহাম্মদ সানোয়ার হোসেন ১ জানুয়ারি থেকে অনুপস্থিত রয়েছেন। ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার ইকবাল হুসাইন ২৮ অক্টোবর থেকে অনুপস্থিত রয়েছেন।

ঢাকা জেলার এসপি আসাদুজ্জামান ৯ সেপ্টেম্বর থেকে, অতিরিক্ত এসপি হাসান আরাফাত ১৯ নভেম্বর থেকে, ডিএমপির সাবেক উপকমিশনার মলয় কুমার পোদ্দার ১৮ অক্টোবর থেকে এবং সিরাজগঞ্জের সাবেক এসপি আরিফুর রহমান ১ জানুয়ারি থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।

২০১৮ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী, বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিতি একটি গুরুতর অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করা হয়। কর্মচারীকে তাঁর অনুপস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা করার জন্য একটি যুক্তিসংগত সুযোগ দেওয়া হয়। যদি কর্মচারীর ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হয়, তবে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এ ব্যবস্থায় তিরস্কার, বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা, পদাবনতি বা চাকরি থেকে অপসারণ করা হতে পারে। গুরুদণ্ড (যেমন অপসারণ) এবং লঘুদণ্ড (যেমন তিরস্কার) উভয়ই শাস্তিরূপে প্রযোজ্য হতে পারে।

বিধিমালা অনুযায়ী, গুরুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ রয়েছে। যদি কোনো কর্মচারী গুরুতর অপরাধ করেন বা দীর্ঘদিন বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে তাঁকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হতে পারে। কোনো কর্মচারী যদি অফিসের নিয়মকানুন বা সরকারি আদেশ লঙ্ঘন করেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণশেষে চাকরি থেকে অপসারণ করা যায়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলেছে, জুলাই অভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন সময় থেকে বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত পুলিশের এসব কর্মকর্তার সন্ধানে প্রশাসন থেকে বিভিন্ন চেষ্টা করা হচ্ছে। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত