ঢাকা, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

ক্ষমা পেতে পারেন সাবেক আইজিপি মামুন; তবে যে শর্তে

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ জুলাই ১১ ০০:২০:০০
ক্ষমা পেতে পারেন সাবেক আইজিপি মামুন; তবে যে শর্তে

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুরে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ তিনি বলেন, “জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় আমাদের বিরুদ্ধে যে হত্যা ও গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সত্য। আমি নিজেকে এসব অপরাধে দোষী মনে করি এবং রাজসাক্ষী হিসেবে আদালতে সেই সময়কার বিস্তারিত তুলে ধরতে চাই। রহস্য উন্মোচনে আমি আদালতকে সর্বাত্মক সহায়তা করতে প্রস্তুত।”

এর মাধ্যমে তিনি ‘অ্যাপ্রোভার’ হিসেবে আবির্ভূত হতে চেয়েছেন।

তার এ বক্তব্যের পর ট্রাইব্যুনাল রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ জারি করে।

এদিকে রাজসাক্ষী হওয়ায় ট্রাইব্যুনালের বিচারে আবদুল্লাহ আল-মামুন দণ্ড থেকে মুক্তি পাবেন, নাকি শাস্তি ভোগ করবেন—এ নিয়ে বিচারপ্রার্থী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল রয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, আসামির বক্তব্যের মাধ্যমে যদি পুরো সত্য উদঘাটিত হয়, তাহলে আদালত তাকে ক্ষমা করতে পারেন। অথবা প্রয়োজনমতো অন্য কোনো সিদ্ধান্তও নিতে পারেন।

ট্রাইব্যুনাল আইনে উল্লেখ রয়েছে, ঘটনার মূল হোতা বা সহায়তাকারীকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ‘রাজসাক্ষী’ ব্যক্তি সাক্ষ্য প্রদান করে সত্য ঘটনা বিস্তারিত প্রকাশের শর্তে ক্ষমা পেতে পারেন। তবে শর্ত থাকে, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে আটক রাখা হবে।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম ‘অ্যাপ্রোভার’ শব্দের ব্যাখ্যায় জানান, আইনের ভাষায় চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ‘অ্যাপ্রোভার’ বা বাংলায় ‘রাজসাক্ষী’ হয়েছেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৩৭ ও ৩৩৮ ধারায় এবং সাক্ষ্য আইনের ১৩৩ ধারায় রাজসাক্ষীর সংজ্ঞা রয়েছে। এর অর্থ হলো, যিনি কোনো অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বা গোপন তথ্য জানেন, যদি ক্ষমা পেতে চান তবে আদালতে অপরাধের সমস্ত সত্য ঘটনা, মূল হোতা ও সহায়তাকারীদের সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ এবং সঠিক তথ্য দেন, তাকে রাজসাক্ষী বলে।

এ সময় অবশ্য বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত রাজসাক্ষীকে কারাগারে আটক রাখা হয়। যদিও পুরানো সময়ে রাজার শাসন থাকায় এই ধরনের সাক্ষীকে ‘রাজসাক্ষী’ বলা হতো, বর্তমানে কেউ কেউ তাকে ‘রাষ্ট্রের সাক্ষী’ হিসেবেও অভিহিত করেন। আসামি হলেও আদালতকে সহযোগিতা করায় রাজসাক্ষীর শাস্তি কম হওয়া বা ক্ষমা পাওয়া সম্ভব হয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস আইন-১৯৭৩-এর ১৫(১) ধারায় বলা হয়েছে, বিচারকেরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে সাক্ষ্যগ্রহণের উদ্দেশ্যে এমন শর্তে ক্ষমা করতে পারেন যে, সে ঘটনার মূল হোতা বা সহায়তাকারী হিসেবে যা জানে তা সম্পূর্ণ ও সত্য তথ্য হিসেবে প্রকাশ করবে। এরপর তাকে সাক্ষী হিসেবে পরীক্ষা করা হবে এবং বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে রাখা হবে।

প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম জানিয়েছেন, রাজসাক্ষী যদি শর্ত পূরণ করে সাক্ষ্য দেন, তাহলে ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে যেকোনো শাস্তি দিয়ে আবার ক্ষমা করতে পারেন।

প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদও বলেন, আইন অনুযায়ী রাজসাক্ষী সমস্ত শর্ত পূরণ করলে তাকে ক্ষমা দেওয়ার সুযোগ ট্রাইব্যুনালের রয়েছে এবং এটি সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

বৈশ্বিক সংকটেও চমক দেখাল বাংলাদেশ

বৈশ্বিক সংকটেও চমক দেখাল বাংলাদেশ

বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সংকটের মধ্যেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। রপ্তানি উন্নয়ন... বিস্তারিত