ঢাকা, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

শিলিগুড়ি করিডোরে রাফাল ও এস-৪০০ মোতায়েন ভারতের

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ মে ৩০ ১৫:৪৪:৫৬
শিলিগুড়ি করিডোরে রাফাল ও এস-৪০০ মোতায়েন ভারতের

শিলিগুড়ি করিডোরে ভারতের সামরিক উপস্থিতি নজিরবিহীনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পূর্ব ভারতের সবচেয়ে স্পর্শকাতর ‘চিকেনস নেক’ করিডোরকে কেন্দ্র করে নয়াদিল্লি একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বলয় গড়ে তুলছে। এর অংশ হিসেবে এবার শিলিগুড়িতে রাফাল যুদ্ধবিমান এবং রাশিয়ার তৈরি এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়েছে। ২০ থেকে ২২ কিলোমিটার প্রশস্ত এই করিডোরটি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর একমাত্র স্থল যোগাযোগ পথ এবং এটি বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও চীনের সংযোগস্থলে অবস্থিত।

পাকিস্তান ইতোমধ্যেই এই সামরিক শক্তিবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন কারণ এখন নয়াদিল্লির কৌশলগত মনোযোগ পূর্ব দিকে সরেছে এবং এটি একটি স্পষ্ট লাল রেখা টানার ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদিও পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হয়েছে। ভারতের নজর এখন বেইজিং ও ঢাকার দিকে বেশি ঘুরেছে।

‘দ্য এশিয়া লাইভ’ জানিয়েছে, ভারত-ভুটান সীমান্ত সংলগ্ন সাম্প্রতিক চীনা সামরিক মহড়া এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন নয়াদিল্লিকে সতর্ক করেছে। বিশেষত, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন ঢাকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে ভারতের পূর্ব সীমান্তে কৌশলগত ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ভারত তার আন্তর্জাতিক সীমান্তের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে মানববিহীন বিমান (UAV) চলাচল নিষিদ্ধ করেছে এবং পূর্ব সীমান্তে আকাশ পথের নজরদারি আরও জোরদার করেছে।

বাংলাদেশের ৩২টি জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান কেনার সম্ভাবনাও ভারতের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এসব বিমান উন্নত AESA রাডার, ইলেকট্রনিক যুদ্ধ পড ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত যা উত্তরের সীমান্তের কাছে মোতায়েন হলে ভারতের বিমানঘাঁটি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর জন্য হুমকি হতে পারে। সম্প্রতি পাকিস্তানি প্রতিনিধিদল ঢাকায় গিয়ে গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি ও সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।

এই পরিবর্তিত নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে ভারত হাশিমারা বিমানঘাঁটিতে রাফাল স্কোয়াড্রনের সঙ্গে ৪০০ কিলোমিটার পরিসরের এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে। এটি শুধুমাত্র সামরিক শক্তি প্রদর্শন নয় বরং এক কৌশলগত সতর্কতা। ভারতীয় সেনাবাহিনী মাল্টি-জোন ডিটারেন্স ডকট্রিন তৈরি করছে যার মধ্যে রয়েছে রিয়েল-টাইম ISR ইন্টিগ্রেশন, সাইবার ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধ ক্ষমতা, ত্রি-সেবা সমন্বয় এবং করিডোরে দ্রুত সামরিক সমাবেশের জন্য পথ, টানেল ও রেল সংযোগের উন্নয়ন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধির জয়সওয়াল উল্লেখ করেছেন, নয়াদিল্লি এই অঞ্চলের ঘটনাবলী নিবিড় নজরে রাখছে এবং প্রয়োজনে সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেবে। এটি স্পষ্ট করে ভারত বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনগুলোকে তার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে দেখে।

শিলিগুড়ি করিডোরে ভারতের এই সামরিক অবস্থান শুধুমাত্র শক্তির প্রদর্শন নয়। এটি একটি কৌশলগত বার্তা যে—উত্তর (চীন) বা পূর্ব (বাংলাদেশ) থেকে আসা যে কোনো সম্ভাব্য হুমকির বিরুদ্ধে ভারত পূর্ণ ক্ষমতায় প্রতিক্রিয়া জানাবে। প্রক্সি জোট, ধূসর-ক্ষেত্র যুদ্ধ ও প্রযুক্তিভিত্তিক সংঘাতের এই সময়ে নয়াদিল্লি পরিষ্কার জানাচ্ছে শিলিগুড়ি করিডোর কেবল একটি যোগাযোগ পথ নয়, এটি ভারতের ‘লাল রেখা’।

তথ্য : জি নিউজ

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত