ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

আজ রোকেয়া দিবস

পার্থ হক
পার্থ হক

রিপোর্টার

২০২৫ ডিসেম্বর ০৯ ১১:১৬:২০

আজ রোকেয়া দিবস

পার্থ হক: বাংলার নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী আজ একই দিনে পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে ঘোষিত এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে ঐক্যবদ্ধ হই, ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করি’। দিনটি উপলক্ষে মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দেশজুড়ে নানা আয়োজনে রোকেয়ার মানবিক ও সামাজিক অবদান স্মরণ করছে।

১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দে জন্ম নেওয়া বেগম রোকেয়া স্বশিক্ষায় বাংলা, উর্দু, আরবি ও ফারসি আয়ত্ত করেন। স্বামী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের উৎসাহে নারী শিক্ষার প্রসারে সক্রিয় হন এবং সাহিত্য, শিক্ষা ও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নারী-পুরুষ সমতার আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৩২ সালের একই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে বিবিসি বাংলার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালিদের তালিকায় তিনি ছিলেন ষষ্ঠ স্থানে। তাঁর রচিত মতিচূর, সুলতানার স্বপ্ন, পদ্মরাগ ও অবরোধ-বাসিনী এখনও নারীমুক্তি-চর্চার অনুপ্রেরণার উৎস।

রোকেয়ার স্মৃতিবিজড়িত পায়রাবন্দ গ্রামে আজ বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে জন্মভিটায় শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা, শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও সংগীত প্রতিযোগিতা এবং নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে র‌্যালি, আলোচনাসভা, মিলাদ-মাহফিল ও প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচনসহ দিনব্যাপী আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মাছুমা হাবিব প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আজম প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখছেন।

তবে উৎসবমুখর আয়োজনে ভাসলেও রোকেয়ার জন্মভূমির বাস্তবতা এখনও উদ্বেগজনক এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। বাল্যবিবাহ দমনে পায়রাবন্দ এখনো পিছিয়ে, জানান বেগম রোকেয়া স্মৃতি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহেদুল আলম। তাঁর মতে, মাধ্যমিকে ১০ শতাংশ এবং উচ্চমাধ্যমিকে ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী বাল্যবিবাহের কারণে ঝরে যাচ্ছে ‘বাতির নিচেই অন্ধকার, নিজের জন্মভূমিতেই বাস্তবায়িত হয়নি রোকেয়ার স্বপ্ন।’

রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র দীর্ঘদিন অচল থাকার পর আজ তা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী জানিয়েছেন, বাংলা একাডেমির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের পর গবেষণা ও অধ্যয়নের নতুন পথ খুলবে। ৩ দশমিক ১৫ একর জায়গাজুড়ে মিলনায়তন, লাইব্রেরি, সংগ্রহশালা ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন কেন্দ্রটির কার্যক্রম ছিল প্রায় বন্ধ।

শেষদিকে সবচেয়ে বড় উদ্বেগ রোকেয়ার পৈতৃক সাড়ে তিনশ বিঘা জমি ও পারিবারিক কবরস্থান এখনো দখলমুক্ত হয়নি। ভূমিদস্যুদের দখলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট হলেও সরকারি উদ্যোগের অভাবে অগ্রগতি হয়নি। স্থানীয় রোকেয়া স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম দুলালের অভিযোগ ৪০ সালের রেকর্ড সংশোধনের সময় অসাধু ভূমি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় জমিদারি দখল হয়ে যায়, কিন্তু সরকার পক্ষ কখনো মামলা পরিচালনায় আন্তরিক ছিল না।

১৯৭৪ সাল থেকে স্থানীয়ভাবে এবং ১৯৯৪ সাল থেকে সরকারিভাবে রোকেয়া দিবস পালিত হলেও, তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ এখনও পিছিয়ে এমন হতাশা স্থানীয় মানুষের কণ্ঠে স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে।

রোকেয়ার শিক্ষা, সাহস ও প্রগতিশীল চিন্তা বাংলা সমাজকে বদলে দেওয়ার যে আলো দেখিয়েছে, তা আজও নারীর অধিকার ও সমতার আন্দোলনে পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করছে। ডিজিটাল যুগেও তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা রোধ, নিরাপদ প্রযুক্তি ব্যবহার এবং ক্ষমতায়নে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি এমন মত বিশেষজ্ঞদের।

বিশ্লেষকদের মতে, বেগম রোকেয়ার আদর্শিক উত্তরাধিকার রক্ষায় কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, প্রয়োজন বাস্তবভিত্তিক সংস্কার ও কার্যকর নীতিমালা। রোকেয়ার জন্মভূমির অনিষ্পন্ন সমস্যা সমাধান, স্মৃতিসৌধ ও গবেষণা কেন্দ্রগুলোকে সক্রিয় করা এবং স্থানীয় থেকে জাতীয় পর্যায়ে নারী শিক্ষার বৈষম্য দূর করলেই তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে নতুন অগ্রগতি আসবে।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত