ছয় মরদেহ পু’ড়িয়ে হ’ত্যা’র নেপথ্য ফাঁস

নিজস্ব প্রতিবেদক :আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যা ও মরদেহ পোড়ানোর ভয়াবহ ঘটনার মামলায় রাজসাক্ষী আবজালুল বুধবার (১৯ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-২–এ জবানবন্দি দেন এবং শেষে ক্ষমা চান। অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল তার জবানবন্দি রেকর্ড করে।

এ মামলার ২৩তম সাক্ষী হিসেবে আবজালুল গত বছরের ৫ আগস্টের সেই নির্মম ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি মরদেহ পোড়ানোর সময় সরাসরি উপস্থিত না থাকলেও বলেন, ১৫ আগস্ট থানায় অস্ত্র জমা দিতে গিয়ে জানতে পারেন তৎকালীন ওসি সায়েদ এবং এএসআই বিশ্বজিৎ ছয়টি লাশ পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার কথা।

চলতি বছরের ২১ আগস্ট এই মামলায় সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল-২। সেদিন উপস্থিত আট আসামির সাতজন নিজেদের নির্দোষ দাবি করলেও এসআই শেখ আবজালুল হক দোষ স্বীকার করেন এবং রাজসাক্ষী হতে আগ্রহ জানান।

তার আবেদন গ্রহণ করা হলে দোষ স্বীকারের অংশটি রেকর্ড করা হয়।

এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ একাধিকবার পিছিয়ে গেলেও আজ তা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ৫ নভেম্বর প্রত্যক্ষদর্শী শাহরিয়ার হোসেন সজিব আদালতে জানান, তার সামনে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এবং তার বন্ধু সাজ্জাদ হোসেন সজলকেও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

আরও আগে, ৩০ অক্টোবর ভুক্তভোগী সানি মৃধা পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার কথা এবং সেদিনের নৃশংসতার বর্ণনা দেন। ২৯ অক্টোবর সাক্ষ্য দেন আশুলিয়া থানার এসআই আশরাফুল হাসান, যিনি ওসির নির্দেশে ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছিলেন।

মামলার প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ১৫ সেপ্টেম্বর, যখন শহীদ আস সাবুরের ভাই রেজওয়ানুল ইসলাম এবং শহীদ সাজ্জাদের বাবা খলিলুর রহমান জবানবন্দি দেন। সূচনা বক্তব্যে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম গত বছরের ৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞের সম্পূর্ণ বিবরণ আদালতে তুলে ধরেন।

এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গত ২ জুলাই দাখিল করা হয়, যেখানে ১৬ জনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ, ৩১৩ পৃষ্ঠার নথি, ৬২ জন সাক্ষী, ১৬৮ পৃষ্ঠার দালিলিক প্রমাণ ও দুটি পেনড্রাইভ জমা দেওয়া হয়। এরপর ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নেয়।

আটজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলেও সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ আরও আটজন পলাতক রয়েছেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে ছয় তরুণ নিহত হওয়ার পর তাদের লাশ পুলিশ ভ্যানে তুলে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে ফেলা হয়। আরও হৃদয়বিদারক বিষয় হলো—তখনও একজন জীবিত ছিলেন, কিন্তু তাকেও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এই ভয়াবহ ঘটনার পর ১১ সেপ্টেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়।

ডুয়া/নয়ন