ঢাকা, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ কার্তিক ১৪৩২

জাপানে উচ্চশিক্ষা: ক্যারিয়ার গঠনে দেশটিতে যেমন সুযোগ

২০২৫ অক্টোবর ৩১ ১৬:৫৪:৫৯

জাপানে উচ্চশিক্ষা: ক্যারিয়ার গঠনে দেশটিতে যেমন সুযোগ

সরকার ফারাবী: ‘সূর্যোদয়ের দেশ’ হিসেবে পরিচিত জাপান আজ উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও প্রযুক্তিনির্ভর ক্যারিয়ারের এক উজ্জ্বল গন্তব্য। উন্নত প্রযুক্তি, গবেষণাবান্ধব পরিবেশ এবং আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাব্যবস্থার কারণে বিশ্বের বহু শিক্ষার্থীর মতো বাংলাদেশের তরুণ–তরুণীরাও বেছে নিচ্ছেন এই দেশকে তাঁদের ভবিষ্যৎ গড়ার স্থান হিসেবে।

জাপানি শিক্ষা সংস্কৃতি: শৃঙ্খলা ও গবেষণার সমন্বয়

উচ্চশিক্ষা–পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মেইসেসের ম্যানেজিং পার্টনার ও চিফ কাউন্সেলর রুহাম মনজুর বলেন, জাপানের শিক্ষা শুধু একাডেমিক নয়, শিক্ষার্থীদের পেশাগত জীবনেও প্রস্তুত করে। শিক্ষক–শিক্ষার্থীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গবেষণা, ইন্টার্নশিপ এবং ক্যারিয়ার পরিকল্পনায় সহায়ক ভূমিকা রাখে। এখানকার শিক্ষাব্যবস্থায় পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও সময়ানুবর্তিতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়।

স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনার সুযোগ

প্রতিবছর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে অসংখ্য শিক্ষার্থী জাপানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়তে যান। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা জাপানের দূতাবাসের মাধ্যমে বা সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে আবেদন করতে পারেন। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়া তুলনামূলক সহজ, পাশাপাশি রয়েছে নানারকম বৃত্তি ও আর্থিক সহায়তার সুযোগ।

জনপ্রিয় বৃত্তি ও আর্থিক সহায়তা

জাপানে বিশেষ করে মাস্টার্স ও পিএইচডি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি বেশ উদার। সবচেয়ে পরিচিত MEXT Scholarship (Monbukagakusho Scholarship) টিউশন ফি, ভর্তি ফি এমনকি আসা–যাওয়ার বিমানভাড়াও বহন করে। এ ছাড়া রয়েছে —

ADB–Japan Scholarship Program, Japan World Bank Scholarship, যেগুলো জীবনযাপন, বই, ভ্রমণ এবং চিকিৎসার খরচও অন্তর্ভুক্ত করে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক ফেলোশিপ ও পারফরম্যান্স বৃত্তিও দেওয়া হয়।

শিক্ষার্থীরা চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক অফিসে ই–মেইল করে এসব সুযোগ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারেন।

যোগ্যতা ও প্রস্তুতি

জাপানের শিক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক ও গবেষণামুখী। তাই বৃত্তির জন্য প্রয়োজন ভালো একাডেমিক ফলাফল, গবেষণায় আগ্রহ, অধ্যবসায় এবং সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ। আবেদনপত্রে গবেষণার পরিকল্পনা (Statement of Purpose) ও ব্যক্তিগত লক্ষ্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হয়, যা নির্বাচনের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে।

জীবনযাপন ও খরচ

জাপানের জীবনযাপন উন্নত, নিরাপদ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ। টোকিও, ওসাকা বা কিয়োটোর মতো শহরগুলোতে নাগরিক সুবিধা সর্বোচ্চ পর্যায়ের। তবে বৃত্তি ছাড়া পড়তে চাইলে বছরে গড়ে ৮ থেকে ৯ হাজার মার্কিন ডলার টিউশন ফি দিতে হয়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক কম।

ভাষা শেখা ও যোগাযোগ দক্ষতা

জাপানি ভাষা শেখা শিক্ষার্থীদের জন্য বাড়তি সুবিধা। এতে শুধু ক্লাস নয়, কাজ ও সামাজিক যোগাযোগও সহজ হয়। অনলাইনে ও ইউটিউবে অনেক ফ্রি কোর্স রয়েছে, পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে JLPT (Japanese Language Proficiency Test) দেওয়ার সুযোগ আছে।

পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২৮ ঘণ্টা পর্যন্ত পার্টটাইম কাজ করতে পারেন। গবেষণাগার, রেস্টুরেন্ট, সুপারশপ বা টিউটরিং–এর মতো কাজের সুযোগ রয়েছে। জাপানের কর্মসংস্কৃতিতে সময়ানুবর্তিতা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়।

ক্যারিয়ারের সম্ভাবনা

পড়াশোনা শেষে জাপানে কাজের সুযোগ ব্যাপক। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে সনি, টয়োটা, হিটাচির মতো বিশ্বখ্যাত কোম্পানিতে সফলভাবে কাজ করছেন। এছাড়া গবেষণা প্রতিষ্ঠান, প্রযুক্তি সংস্থা ও আর্থিক খাতেও বিদেশিদের চাহিদা বেড়েছে। এখান থেকে ইউরোপ ও আমেরিকায় সরাসরি চাকরির পথও উন্মুক্ত

জাপানে উচ্চশিক্ষা কেবল একটি ডিগ্রি অর্জনের বিষয় নয় এটি এক আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা, গবেষণার গভীরতা এবং পেশাগত উৎকর্ষতার যাত্রা। সঠিক পরিকল্পনা, সময়মতো প্রস্তুতি এবং আত্মবিশ্বাসী আবেদন আপনাকে পৌঁছে দিতে পারে কাঙ্ক্ষিত সেই লক্ষ্যে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত