ঢাকা, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২

বিদেশে উচ্চশিক্ষা: পাড়াশোনার পাশাপাশি উপার্জনের সুযোগ

২০২৫ অক্টোবর ২৯ ১৫:৩৬:৪৬

বিদেশে উচ্চশিক্ষা: পাড়াশোনার পাশাপাশি উপার্জনের সুযোগ

সরকার ফারাবী: বিদেশে উচ্চশিক্ষা এখন আর শুধু ডিগ্রি অর্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় এটি হয়ে উঠেছে ভবিষ্যতের ক্যারিয়ার গঠনের অন্যতম সোপান। আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা, গবেষণার অভিজ্ঞতা ও বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক শিক্ষার্থীদের পেশাগত দক্ষতা বাড়ায় এবং বৈশ্বিক চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রাখে।

সেনজেন এডুকেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুল হক বলেন, অনেক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরির মাধ্যমে জীবিকার খরচ বহন ও বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকেন। তবে সব দেশে এই সুযোগের ধরন ও পারিশ্রমিক এক নয়। বর্তমানে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগের দিক থেকে সবচেয়ে জনপ্রিয় দেশগুলো হলো যুক্তরাজ্য, জার্মানি, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও নিউজিল্যান্ড।

যুক্তরাজ্য: পড়াশোনা ও কাজের ভারসাম্য

যুক্তরাজ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশন চলাকালীন প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা কাজ করতে পারেন। ঘণ্টাপ্রতি মজুরি সাধারণত ১,২০০ থেকে ১,৮০০ টাকার মধ্যে থাকে। অর্থাৎ, গড়ে একজন শিক্ষার্থী মাসে কর বাদে ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। এতে আবাসন, খাদ্য ও দৈনন্দিন খরচের বড় অংশ মেটানো সম্ভব হয়।

এ ছাড়া ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন স্কলারশিপ, গ্রান্ট ও স্টুডেন্ট লোনের সুযোগও দিয়ে থাকে, যা শিক্ষার্থীদের আর্থিক চাপ কমায় এবং পড়াশোনার পাশাপাশি স্বনির্ভর হতে সহায়তা করে।

অস্ট্রেলিয়া: কাজের বাড়তি সময় ও দীর্ঘমেয়াদি সুযোগ

অস্ট্রেলিয়া দক্ষিণ এশীয় শিক্ষার্থীদের অন্যতম পছন্দের গন্তব্য। এখানে শিক্ষার্থীরা সেমিস্টারের সময় দুই সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে পারেন, আর ছুটির সময় কাজের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। ঘণ্টাপ্রতি আয় দুই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা শেষে শিক্ষার্থীরা সহজেই ওয়ার্ক ভিসা পেতে পারেন, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ করে দেয়।

নিউজিল্যান্ড: পড়াশোনা থেকে স্থায়ী বসবাসের পথে

নিউজিল্যান্ডে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার সময় সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা এবং ছুটিতে পূর্ণকালীন কাজ করতে পারেন। ঘণ্টাপ্রতি আয় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। স্নাতক শেষে ‘পোস্ট-স্টাডি ওয়ার্ক ভিসা’র মাধ্যমে ১ থেকে ৩ বছর পর্যন্ত চাকরির সুযোগ মেলে, যার ফলে অনেকেই পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পান।

জার্মানি: বিনা টিউশন ফিতে বিশ্বমানের শিক্ষা

জার্মানির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিউশন ফি নেই বললেই চলে, যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বড় সুবিধা। শিক্ষার্থীরা বছরে ১২০ দিন পূর্ণকালীন বা ২৪০ দিন খণ্ডকালীন কাজ করতে পারেন। এতে মাসে গড়ে এক থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত উপার্জন সম্ভব।

পড়াশোনা শেষে শিক্ষার্থীরা ১৮ মাসের পোস্ট-স্টাডি ওয়ার্ক পারমিট পান, যার মধ্যে তারা জার্মানিতে পেশাগত জীবন শুরু করতে পারেন।

কানাডা: শিক্ষার সঙ্গে স্থায়ী ক্যারিয়ারের সম্ভাবনা

কানাডা সহজ অভিবাসননীতি ও উচ্চমানের শিক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এখানে শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা ও ছুটির সময় পূর্ণকালীন কাজ করতে পারেন। ঘণ্টাপ্রতি আয় ১,৪০০ থেকে ২,০০০ টাকা পর্যন্ত।

স্নাতক শেষে সর্বোচ্চ ৩ বছরের জন্য ‘পোস্ট গ্রাজুয়েশন ওয়ার্ক পারমিট’ পাওয়া যায়, যা ভবিষ্যতে স্থায়ী বসবাসের পথ খুলে দেয়।

ফ্রান্স: সাশ্রয়ী পড়াশোনা ও কাজের স্বাধীনতা

ফ্রান্সে বছরে সর্বোচ্চ ৯৬৪ ঘণ্টা (প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২০ ঘণ্টা) কাজের অনুমতি রয়েছে। ঘণ্টাপ্রতি আয় ১,২০০ থেকে ১,৬০০ টাকা পর্যন্ত। এখানে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর টিউশন ফি তুলনামূলক কম ২,৭০০ থেকে ৩,৭০০ ইউরো পর্যন্ত।

এ ছাড়া ফরাসি সরকার ও বিভিন্ন ফাউন্ডেশনের দেওয়া আইফেল এক্সিলেন্স স্কলারশিপ শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রা ও পড়াশোনার ব্যয় বহনে বড় ভূমিকা রাখে।

ইউরোপের সার্বিক চিত্র

ইউরোপের প্রায় ৩০টি দেশে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করতে পারেন। এর মধ্যে ১৪টি দেশে (যেমন যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, পর্তুগাল) আলাদা ওয়ার্ক পারমিটের প্রয়োজন নেই।

ঘণ্টাপ্রতি সর্বোচ্চ আয় দেখা যায় লুক্সেমবার্গ, আইসল্যান্ড, নরওয়ে, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাজ্যে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত