ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৬ কার্তিক ১৪৩২

মাকিনাক দ্বীপ: ইঞ্জিনবিহীন শান্তির ঠিকানা

২০২৫ অক্টোবর ২১ ১৫:৩৫:০১

মাকিনাক দ্বীপ: ইঞ্জিনবিহীন শান্তির ঠিকানা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :মিশিগানের হিউরন হ্রদের মাঝে অবস্থিত মাকিনাক দ্বীপে পৌঁছালে মনে হবে যেন ওয়েস্টার্ন গল্পের এক টুকরো ভূমি। এখানে মোটরগাড়ি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, এবং গাড়ির হর্নের বদলে শোনা যায় ঘোড়ার খুঁড়ের শব্দ। স্থানীয়দের ভাষায়, “এখানকার রাজা হল ঘোড়া।”

১৮৯৮ সালে এক গাড়ির ব্যাকফায়ারে স্থানীয় ঘোড়াগুলো ভয় পেয়ে যাওয়ার পর থেকে দ্বীপে ইঞ্জিনচালিত যানবাহন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এরপর থেকে দ্বীপবাসীরা আধুনিকতার বদলে শান্ত জীবনযাপনকেই প্রধান্য দিয়েছেন।

প্রতি গ্রীষ্মে সাধারণ জীবনের স্বাদের সন্ধানে প্রায় ১২ লাখ মানুষ মাকিনাক ভ্রমণে আসেন। তারা ঘোড়ার গাড়ি, সাইকেল বা হাইকিংয়ের মাধ্যমে ৭০ মাইলের ট্রেইল, বিখ্যাত ফাজ এবং আর্ক রক দেখেন। দ্বীপে রয়েছে ১৩৮ বছরের পুরনো গ্র্যান্ড হোটেল, যেখানে বিশেষ সজ্জিত কক্ষ ও দীর্ঘ বারান্দা দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে।

মাকিনাকের নামকরণের ইতিহাস বহু প্রাচীন। স্থানীয় আদিবাসীরা দ্বীপের চুনাপাথরের ঢাল ও সবুজ বনকে বিশাল কচ্ছপের পিঠের সঙ্গে মিলিয়ে এটিকে ‘মিচিলিমাকিনাক’ বা বাংলায় বলা যেতে পারে ‘মহান কচ্ছপের স্থান’ হিসেবে নামকরণ করেন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে ১৭৮০ সালে এখানে প্রতিরক্ষা দুর্গ নির্মিত হয়, যা এখনও দর্শনার্থীরা দেখতে পান।

দ্বীপের ৮০ শতাংশ এলাকা মাকিনাক দ্বীপ স্টেট পার্কের অন্তর্ভুক্ত। এখানে প্রাচীন বন, চুনাপাথরের স্তম্ভ, হাইকিং, সাইকেল চালানো বা ঘোড়ার গাড়িতে ঘুরে আর্ক রক দেখা যায়। পর্যটকরা প্রায় দেড় হাজার ভাড়া দেওয়ার জন্য সাইকেল ব্যবহার করেন। স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, “ঘোড়া ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ; খুঁড়ের শব্দ শুনলেই মনে হবে অতীতে ফিরে গেছেন।”

শীতকালে দ্বীপ বরফে ঢাকা পড়ে এবং ফেরি পরিষেবা বন্ধ থাকে। তবে বসন্ত ও গ্রীষ্মে দ্বীপ প্রাণ ফিরে পায়। লাইলাক ফেস্টিভ্যালের সময় গাছগুলো ফুলে ভরে ওঠে, রাতের আকাশ দেখা যায় ফোর্ট হোল্মস।

মাকিনাক এমন এক দ্বীপ, যেখানে ইঞ্জিনের শব্দ নেই, মানুষ, ঘোড়া ও প্রকৃতি মিলিয়ে অতীতের শান্ত, সুশৃঙ্খল জীবনকে ধরে রেখেছে।

ডুয়া/নয়ন

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত