ঢাকা, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২

পরমাণু চুক্তি স্থগিত করল ইরান

২০২৫ অক্টোবর ১৩ ১০:২৮:৩৭

পরমাণু চুক্তি স্থগিত করল ইরান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাতিসংঘের পরমাণু প্রকল্প তদারকি সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ)-এর সঙ্গে স্বাক্ষরিত সহযোগিতা চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাগচি রোববার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেন।

আরাগচি বলেন, “আমরা আপাতত আইএইএ-এর সঙ্গে পারমাণবিক সহযোগিতা চুক্তি স্থগিত করেছি। তবে জাতিসংঘ যদি এমন কোনো প্রস্তাব দেয় যা ইরানের সার্বভৌম অধিকার ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সহায়ক হয়, তখন আমরা পুনরায় আলোচনায় ফিরব।”

উল্লেখ্য, ১৯৬৮ সালে ইরান আইএইএ-এর সঙ্গে ‘নন-প্রোলিফারেশন ট্রিটি’ বা এনপিটি চুক্তি স্বাক্ষর করে, যার মাধ্যমে দেশটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা কখনও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করবে না এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। সে সময় ইরানের নেতৃত্বে ছিলেন শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভী।

তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইরান ও আইএইএ-এর সম্পর্ক ক্রমেই তিক্ত হয়ে ওঠে। গত ৬ জুন আইএইএ দাবি করে, ইরানের কাছে বর্তমানে ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম মজুত রয়েছে, যার বিশুদ্ধতা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। এই মাত্রা ৯০ শতাংশে উন্নীত করা গেলে তা দিয়ে সহজেই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা সম্ভব।

এই বিবৃতি প্রকাশের এক সপ্তাহ পর, ১২ জুন রাতে ইসরায়েল শুরু করে বিমান অভিযান ‘দ্য রাইজিং লায়ন’। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু পরে এক ভিডিও বার্তায় জানান, আইএইএ-এর রিপোর্টের ভিত্তিতেই এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে।

১২ দিনব্যাপী ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে শেষদিকে যুক্তরাষ্ট্রও যুক্ত হয়। ভয়াবহ এই সংঘাতে ইরানের সেনাপ্রধানসহ বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও কমপক্ষে ১২ জন পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশ কিছু পারমাণবিক স্থাপনাও। তবে আইএইএ এখনো জানাতে পারেনি, ওই ৪০০ কেজি ইউরেনিয়ামের বর্তমান অবস্থান কোথায়।

সংঘাত শেষ হওয়ার পর আইএইএ ইরানের সঙ্গে পুনরায় সংলাপের আগ্রহ জানায়, কিন্তু তেহরান জানায়— সংলাপে আপত্তি নেই, তবে পরমাণু স্থাপনাগুলো পরিদর্শনের অনুমতি দেওয়া হবে না।

এরপর সেপ্টেম্বর মাসে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি লন্ডনে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে জাতিসংঘের প্রস্তাব মেনে নেওয়ার আহ্বান জানানো হলেও, ইরান তার অবস্থানে অনড় থাকে। বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পরপরই জাতিসংঘ ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

রোববারের সাক্ষাৎকারে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে পুনরায় আলোচনার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আরাগচি বলেন, “আমরা এখন আর ইউরোপের সঙ্গে বৈঠকের প্রয়োজন দেখছি না। বর্তমান পরিস্থিতিতে সংলাপের কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই।”

এমজে

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত