ঢাকা, শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

ভারতের ট্রানজিট বন্ধ, তারপরও রপ্তানিতে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’-এর জয়যাত্রা

হাসান মাহমুদ ফারাবী
হাসান মাহমুদ ফারাবী

রিপোর্টার

২০২৫ অক্টোবর ০৮ ১১:৩০:০৪

ভারতের ট্রানজিট বন্ধ, তারপরও রপ্তানিতে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’-এর জয়যাত্রা

হাসান মাহমুদ ফারাবী: ভারতের বিমানবন্দর হয়ে ট্রানজিট বন্ধ করে দেওয়ার পরও ইউরোপে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানি অব্যাহত রয়েছে। রপ্তানিকারকরা বিকল্প রুট ও দেশে উন্নত সেবা ব্যবহার করে রপ্তানি কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রেখেছেন।

রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, গত এপ্রিল মাসে ভারত ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ করার পর থেকে বেশিরভাগ পোশাক রপ্তানি হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সমুদ্রপথে শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরে। সেখানে সময় সংকট দেখা দিলে সেই চালানগুলো দুবাই হয়ে বিমানে ইউরোপে পাঠানো হয়।

অন্যদিকে, অনেক বড় জাহাজ কলম্বো থেকে সরাসরি ইউরোপের গন্তব্যে পোশাক বহন করছে। সাধারণত বাংলাদেশি রপ্তানিকারকেরা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার পেনাং বন্দরে ছোট জাহাজে পণ্য পাঠান, যা পরে মাদার ভেসেলে করে ইউরোপে যায়।

ভারতের ট্রানজিট বন্ধ হওয়ার পর সরকার ইউরোপগামী পণ্যের স্ক্রিনিংয়ের জন্য সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইডিএস) স্থাপন করেছে। পাশাপাশি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (এইচএসআইএ) চারটি ইডিএস মেশিনই এখন মেরামত করে সচল রাখা হয়েছে।

এ ছাড়া উভয় বিমানবন্দরে রপ্তানি কার্গোর গ্রাউন্ড-হ্যান্ডলিং চার্জ প্রতি কেজিতে ৫–৬ সেন্ট কমানো হয়েছে, যা রপ্তানিকারকদের জন্য বড় সহায়তা হয়েছে।

বিজিএমইএ পরিচালক ফয়সাল সামাদ জানান, বর্তমানে বিমানপথে রপ্তানির মৌসুম শান্ত, কারণ অনেক ক্রেতা পণ্য পাঠাচ্ছেন সমুদ্রপথে। ফলে কার্গো ফ্লাইটে জায়গার কোনো সংকট নেই।

তিনি আরও বলেন, “এখন ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রগামী পোশাকের বড় অংশ কলম্বো হয়ে যাচ্ছে, আর সময়সীমা ঘনিয়ে এলে কিছু চালান দুবাই থেকে বিমানে পাঠানো হয়।”

ভারতের ট্রানজিট বন্ধের আগে রপ্তানিকারকেরা ট্রাকযোগে পণ্য পাঠাতেন বেনাপোল হয়ে কলকাতা ও দিল্লি বিমানবন্দরে, যেখানে স্ক্রিনিং সুবিধা বেশি ছিল। কারণ ঢাকায় সে সময় স্ক্রিনিং মেশিন ও কার্গো ফ্লাইটের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল।

বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে ৩৬টি দেশে ৩৪ হাজার ৯০০ টন পোশাক রপ্তানি হয়েছে ভারতের বিমানবন্দর হয়ে, যার মূল্য ছিল ৪৬২ মিলিয়ন ডলার। অনুমান করা হয়, বছরে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য এই রুটে পাঠানো হতো।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) সাবেক সভাপতি কবির আহমেদ বলেন, “ঢাকা ও সিলেট উভয় বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং সুবিধা এখন অনেক উন্নত। এইচএসআইএ-তে চারটির মধ্যে তিনটি ইডিএস সবসময় সচল থাকে এবং বিস্ফোরক শনাক্তকরণ কুকুরও মোতায়েন আছে। স্ক্রিনিং বিলম্ব নিয়ে এখন রপ্তানিকারকদের কোনো অভিযোগ নেই।”

তিনি জানান, চার্জ কমার পর এখন সিলেট থেকে ইউরোপে প্রতি কেজি কার্গোর ভাড়া ২.৮০ ডলার, তবে নভেম্বর–ডিসেম্বরে পিক মৌসুমে ঢাকা থেকে ভাড়া বেড়ে ৩.৮০–৪.০০ ডলার পর্যন্ত হয়। তুলনামূলকভাবে ভারতের রুটে খরচ হতো ২.১০–২.২০ ডলার, সঙ্গে বেনাপোল পরিবহন বাবদ অতিরিক্ত ১৫–২০ সেন্ট।

বর্তমানে ঢাকায় ও সিলেটে প্রতিদিন গড়ে ৪৫০ টন শুকনো পণ্য পাঠানো হয়, যা পিক মৌসুমে বেড়ে ১,২০০ টনে পৌঁছায়।

এক ইউরোপীয় ক্রেতা বলেন, “সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের বিকল্প ব্যবস্থার কারণে বিমান রপ্তানি অনেক উন্নত হয়েছে। সরকারের দ্রুত পদক্ষেপেই এ উন্নতি সম্ভব হয়েছে।”

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিএএবি) সদস্য (অপারেশন ও পরিকল্পনা) এয়ার কমোডর আবু সাঈদ মেহবুব খান জানান, ইউরোপগামী কার্গোর স্ক্রিনিং চার্জ ৮ সেন্ট থেকে কমিয়ে ৬ সেন্ট করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা প্রায় ২৫ শতাংশ কম।

এইচএসআইএ নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এস এম রাগিব সামাদ বলেন, “দেশের রপ্তানি কার্যক্রমে সহায়তা দিতে কার্গো ফ্লাইটে কোনো বিধিনিষেধ নেই। নভেম্বর–ডিসেম্বরে অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে যাতে পিক মৌসুমেও নির্বিঘ্ন পরিবহন নিশ্চিত করা যায়।”

সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক মোহাম্মদ হাফিজ আহমেদ জানান, আগস্ট মাসে বিমানবন্দরটি তিনটি শুকনো কার্গো চালান পরিচালনা করেছে। বর্তমানে এর সংরক্ষণক্ষমতা ১০০ টন, যা প্রয়োজনে আরও বাড়ানো সম্ভব।

যদিও আগে সিএএবি কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ঢাকার বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ডিসেম্বরের মধ্যেই চালু হবে, এখন তা বাস্তবসম্মত মনে হচ্ছে না।

বেসামরিক বিমান চলাচল বিষয়ক উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেন, “জাপানি কনসোর্টিয়াম যদি নতুন টার্মিনালের দায়িত্ব না নেয়, তবে সরকার অন্য আন্তর্জাতিক অপারেটরের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত।”

এএসএম/

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত