ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫, ২২ আশ্বিন ১৪৩২

ইসলামে বাবার সম্পত্তি ভাগের সঠিক নিয়ম

২০২৫ অক্টোবর ০৭ ১৯:২৯:২২

ইসলামে বাবার সম্পত্তি ভাগের সঠিক নিয়ম

নিজস্ব প্রতিবেদক:ইসলামে উত্তরাধিকার আইন বা ফারায়েজ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল বিষয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ বিষয়ে বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেছেন, উত্তরাধিকার আইন নিজে জানো ও অন্যকে শেখাও, কারণ এটি সব জ্ঞানের অর্ধেক। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, মুসলমান হয়েও অনেকেরই এ বিষয়ে পর্যাপ্ত ধারণা নেই। অথচ কুরআন ও হাদিসে উত্তরাধিকার বণ্টন সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ফারায়েজের ভিত্তি

মুসলিম আইনে কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমার আলোকে মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদ তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। এই প্রক্রিয়াকেই বলা হয় ফারায়েজ।

পবিত্র কোরআনের সুরা নিসা (আয়াত ১১)-তে আল্লাহ তাআলা বলেন—

আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন: এক পুত্রের অংশ হবে দুই কন্যার সমান... (বাকি আয়াত সংক্ষেপিত)।

এই আয়াতে উত্তরাধিকার বণ্টনের মৌলিক কাঠামো স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

সম্পদ বণ্টনের আগে যা করতে হবে

কোনো মুসলমান মারা গেলে তার সম্পদ বণ্টনের আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হয়:

১. প্রথমে মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফনের খরচ মেটাতে হবে।

২. তার জীবিত অবস্থার সব ঋণ ও দেনা পরিশোধ করতে হবে।

৩. স্ত্রীর দেনমোহর (যদি বাকি থাকে) পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক।

৪. তিনি কোনো দান বা উইল করে গেলে, তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

এসব আনুষ্ঠানিকতা শেষে যা অবশিষ্ট থাকবে, তা ফারায়েজ অনুযায়ী উত্তরাধিকারীদের মধ্যে ভাগ করা হবে।

বাবার সম্পত্তিতে সন্তানের অংশ

ছেলেসন্তানের অংশ

যদি মৃত ব্যক্তির ছেলে ও মেয়ে উভয়েই থাকে, তবে ছেলে মেয়ের দ্বিগুণ অংশ পাবে অর্থাৎ অনুপাত হবে ২:১।

যদি কোনো মেয়ে না থাকে, তবে অন্যান্য অংশীদারদের অংশ প্রদানের পর বাকি সম্পত্তি পুরোপুরি ছেলেদের মধ্যে বণ্টিত হবে।

মেয়েসন্তানের অংশ

মেয়ে সন্তানের অংশ নির্ভর করে সে একা না একাধিক:

একমাত্র মেয়ে হলে, সে মোট সম্পত্তির অর্ধেক (১/২) পাবে।

একাধিক মেয়ে থাকলে, সবাই মিলে তিন ভাগের দুই ভাগ (২/৩) পাবে।

পুত্র থাকলে, কন্যা পাবে পুত্রের অর্ধেক।

ইসলামে কোনো কন্যা কখনো উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয় না।

পিতা-মাতা ও অন্যান্য আত্মীয়ের অংশ

যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকে, তবে তার মা পাবেন মোট সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ (১/৬)।

কিন্তু সন্তান না থাকলে এবং ভাইবোনও না থাকলে, মা পাবেন তিন ভাগের এক ভাগ (১/৩)।

পিতা মারা গেলে, জীবিত অবস্থায় তার যে অংশ পাওয়ার অধিকার ছিল, মৃত্যুর পর সেই অংশ তার উত্তরাধিকারীরা পাবে।

উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চনার নিয়ম

ইসলামী আইনে কোনো সন্তানকে ত্যাজ্য ঘোষণা করে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না। তবে কেউ যদি জীবিত অবস্থায় বৈধভাবে (রেজিস্ট্রিকৃতভাবে) সম্পত্তি অন্য কাউকে দান করে যান, তাহলে বঞ্চিত সন্তানের জন্য আর অংশ থাকবে না।

সৎ বাবা-মা বা সৎ সন্তানরা একে অপরের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী নয়।এ ছাড়া কেউ যদি কাউকে হত্যা করে, তবে সে হত্যাকারী সেই ব্যক্তির সম্পত্তির অংশ পাবে না।স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ হলে তারাও পরস্পরের উত্তরাধিকারী থাকে না।

জারজ সন্তান (হানাফি আইনে) তার মা ও মাতৃকুলের সম্পত্তিতে অধিকার রাখে, কিন্তু পিতৃকুলের নয়।

রাষ্ট্রের অধিকার

যদি মৃত ব্যক্তির কোনো উত্তরাধিকারী না থাকে এবং জীবিত অবস্থায় সম্পত্তি কাউকে না দেন, তবে সেই সম্পত্তি সরকারের তত্ত্বাবধানে চলে যাবে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত