ঢাকা, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২

আপনার অজান্তেই কিডনি ধ্বংস করছে যে ৭ অভ্যাস

২০২৫ অক্টোবর ০৬ ১৭:১৪:৪৯

আপনার অজান্তেই কিডনি ধ্বংস করছে যে ৭ অভ্যাস

লাইফস্টাইল ডেস্ক: আমাদের শরীরের অন্যতম পরিশ্রমী কিন্তু নীরব অঙ্গ হলো কিডনি। প্রতিদিন নিরবচ্ছিন্নভাবে এটি শরীরের বর্জ্য ছেঁকে ফেলে, তরল ও লবণের ভারসাম্য বজায় রাখে, প্রয়োজনীয় হরমোন তৈরি করে এবং শরীরের রাসায়নিক কার্যক্রমকে সঠিক রাখে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো: এত গুরুত্বপূর্ণ কাজের পরও কিডনির ক্ষয় সাধারণত বোঝা যায় না যতক্ষণ না তা গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছায়।

বিশ্বজুড়ে কিডনি রোগকে নীরব ঘাতক বলা হয়। আন্তর্জাতিক নেফ্রোলজি সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ৮৫০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বিভিন্ন ধরনের কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত। এর মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ (CKD) ও তীব্র কিডনি আঘাত (AKI) উভয়ই রয়েছে। ভীতিকর বিষয় হলো: রোগটি ধরা পড়ার আগেই কিডনির কার্যকারিতার প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কিডনির এই ক্ষয় অনেক সময় আমাদের অজান্তেই ঘটে যায়, এমন কিছু দৈনন্দিন অভ্যাসের কারণে, যেগুলোকে আমরা সাধারণ মনে করি। নিচে সেসব অভ্যাস তুলে ধরা হলো, যেগুলো ধীরে ধীরে কিডনির জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

১) দীর্ঘস্থায়ী পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন)

পর্যাপ্ত পানি না খেলে কিডনিকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করে প্রস্রাব ঘনীভূত করতে হয় এবং বর্জ্য ছেঁকে ফেলতে হয়। গরম আবহাওয়ায় নিয়মিত পানিশূন্যতা কিডনির টিস্যু ক্ষয় করতে পারে। প্রস্রাবের রং গাঢ় হয়ে গেলে সেটি শরীরের সতর্ক সংকেত যে আরও তরল প্রয়োজন।

২) অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ

প্রতিদিনের খাবারে বেশি লবণ রক্তচাপ বাড়ায়, যা কিডনির ক্ষতির অন্যতম প্রধান কারণ। উচ্চ রক্তচাপ কিডনির সূক্ষ্ম রক্তনালীগুলোকে দুর্বল করে দেয়, ফলে ফিল্টার করার ক্ষমতা হ্রাস পায়। প্রক্রিয়াজাত খাবার, টিনজাত স্যুপ, ফাস্ট ফুড এগুলো লবণের প্রধান উৎস।

৩) অতিরিক্ত চিনি ও মিষ্টি পানীয়

সোডা, জুস বা ফ্রুক্টোজসমৃদ্ধ পানীয় শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধ, ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি ও বিপাকীয় চাপ তৈরি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এসব চিনি-সমৃদ্ধ পানীয় ও প্রক্রিয়াজাত খাবার ধীরে ধীরে কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট করে।

৪) অতিরিক্ত প্রোটিন বা ফসফরাসযুক্ত খাবার

প্রোটিন প্রয়োজনীয় হলেও অতিরিক্ত গ্রহণ কিডনিকে বাড়তি বর্জ্য ছেঁকে ফেলতে বাধ্য করে। আবার ফসফরাসসমৃদ্ধ খাবার যেমন প্রক্রিয়াজাত মাংস, কোলা ও প্যাকেটজাত খাবার, কিডনির ক্ষতি আরও দ্রুত বাড়াতে পারে।

৫) ঘন ঘন ব্যথানাশক সেবন (NSAIDs)

আইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সেন, অ্যাসপিরিনের মতো ব্যথানাশক ওষুধ কিডনিতে রক্ত প্রবাহ কমায়। নিয়মিত বা দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে এটি তীব্র কিডনি ক্ষতির কারণ হতে পারে। মাথাব্যথা বা শরীর ব্যথার জন্য বারবার এসব ওষুধ নেওয়া তাই ঝুঁকিপূর্ণ।

৬) ঘুমের অভাব ও দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ

ঘুম হলো শরীরের মেরামতের সময়। ঘুমের ঘাটতি ও মানসিক চাপ একসঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ ও হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, যা ধীরে ধীরে কিডনির ক্ষয় ঘটায়।

৭) ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন

ধূমপান রক্তনালী সংকুচিত করে, কিডনিতে অক্সিজেন সরবরাহ কমায়। অপরদিকে অতিরিক্ত অ্যালকোহল শরীরকে পানিশূন্য করে এবং রক্তচাপ বাড়ায়; দুটোই কিডনি বিকলের বড় কারণ।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পান, লবণ-চিনি নিয়ন্ত্রণ, সুষম খাদ্যগ্রহণ ও পর্যাপ্ত ঘুম কিডনির সুস্থতা বজায় রাখে। সময়মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রস্রাব পরীক্ষাও কিডনি রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তে সহায়ক।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত