ঢাকা, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২

২৭ বছর বিনা বেতনে শিক্ষাদান শেষে এখন নাইটগার্ড

২০২৫ অক্টোবর ০৫ ১৬:৪৮:৫৮

২৭ বছর বিনা বেতনে শিক্ষাদান শেষে এখন নাইটগার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক :পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার টোকরাভাষা ইসলামিয়া একরামিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসার পরিচিত মুখ মো. তোহিদুল ইসলাম, যিনি ‘সোনা মাস্টার’ নামে এলাকায় পরিচিত, তার জীবন কাহিনি একদিকে গর্বের, অন্যদিকে কষ্টের প্রতিচ্ছবি। কাগজে কলমে অফিস সহকারী হলেও, বাস্তবে তিনি ছিলেন এক নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক।

১৯৮৭ সালে টোকরাভাষা ইসলামিয়া একরামিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসায় ইবতেদায়ী শাখায় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। ২০০১ সালে মাদরাসাটি দাখিল শাখার অনুমোদন পেলে, তোহিদুল ইসলাম অফিস সহকারী পদে থাকলেও শিক্ষকতার দায়িত্ব চালিয়ে যান। ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করেছেন।

দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে তিনি কোনো বেতন না নিয়েই মাদরাসায় শিক্ষকতা করেছেন। কিন্তু মাদরাসাটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় অবসরে যাওয়ার পরও তিনি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা পাননি। বর্তমানে জীবিকার তাগিদে রাত জেগে বাজার পাহারা দেন। স্থানীয় টোকরাভাষা বাজারে নাইটগার্ড হিসেবে কাজ করে দিনে মাত্র ১৫০ টাকা আয় করেন, যা দিয়ে চলতে হয় তার সংসার।

সোনা মাস্টার জানান, জীবনের সোনালি সময়টা তিনি শিক্ষার্থীদের জন্যই উৎসর্গ করেছেন। কোনো সময় পারিশ্রমিক না পেলেও কাজ করে গেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। এখন বার্ধক্যে এসে প্রাপ্য কিছু না পেয়ে তাকে রাত জেগে বাজার পাহারা দিতে হচ্ছে।

মাদরাসা সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসাটিতে বর্তমানে প্রায় ১৫০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। প্রতি বছর ১৫–২০ জন শিক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয়। তবে ১৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীই মানবেতর জীবনযাপন করছেন, কারণ প্রতিষ্ঠানটি এখনও এমপিওভুক্ত হয়নি।

বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা জানান, সোনা মাস্টার ছিলেন তাদের প্রিয় শিক্ষক। এখনো তিনি মাঝে মাঝে মাদরাসায় গিয়ে ক্লাস নেন। তার আচরণ এবং শিক্ষা দেওয়ার পদ্ধতি ছিল অভিভাবকের মতো। কেউ ভালো জায়গায় পৌঁছেছে বললেই মনে পড়ে যায় তার অবদান।

স্থানীয়রা বলছেন, এমন আত্মত্যাগী শিক্ষককে আজ নাইটগার্ডের কাজ করতে হচ্ছে, এটা অত্যন্ত কষ্টের ও লজ্জার। তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, মাদরাসাটি দ্রুত এমপিওভুক্ত করার এবং সোনা মাস্টারের মতো নিবেদিত মানুষদের ন্যায্য সম্মান ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধি মোশাররফ হোসেন বলেন, সোনা মাস্টার শুধুই শিক্ষক নন, তিনি এই এলাকার এক আদর্শ মানুষ। আর বণিক সমিতির সভাপতি জানিয়েছেন, তার দায়িত্ববোধ খুবই প্রশংসনীয় এবং সমিতি থেকে তাকে সহায়তা করার চেষ্টা চলছে।

মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বারবার আবেদন করেও তারা এখন পর্যন্ত এমপিওভুক্তির কোনো আশার আলো দেখেননি। আর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, সোনা মাস্টারের শিক্ষা বিস্তারে অবদান প্রশংসনীয় এবং তার মত মানুষদের পাশে থাকা প্রয়োজন।

ডুয়া/নয়ন

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত