ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২

ইসলামের দৃষ্টিতে জ্ঞান ও শিক্ষকতার মহত্ত্ব

২০২৫ অক্টোবর ০৫ ১৪:০১:৪৭

ইসলামের দৃষ্টিতে জ্ঞান ও শিক্ষকতার মহত্ত্ব

ডুয়া ডেস্ক :জ্ঞানের উৎস মানবজাতির জন্য আলোকবর্তিকা। পবিত্র কোরআন এবং প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সুন্নাহই জ্ঞানের মূল আধার। ‘আইয়ামে জাহিলিয়াত’-এ শিক্ষিত ছিলেন মাত্র সতেরজন। সেসব অন্ধকারময় যুগে মহান নবী (সা.) মানুষের জন্য আলোকিত পথ প্রদর্শন করেছিলেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন, “বু-ইসতু মুআল্লিমান”—আমি প্রেরিত হয়েছি শিক্ষক হিসেবে (ইবনে মাজাহ)। আল্লাহ তায়ালা প্রথমে পাঠের নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, “পাঠ করো তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, যিনি মানুষকে শিখিয়েছেন যা সে জানত না” (সুরা আলাক, আয়াত ১–৫)।

জ্ঞানের প্রকারভেদ বহুপ্রকার। কোরআন ও হাদিসে এর ব্যাখ্যা যেমন—‘ইলমুল ইয়াকিন’ বা বিশ্বাসগত জ্ঞান, ‘আইনুল ইয়াকিন’ বা চাক্ষুষজ্ঞান, ‘হাক্কুল ইয়াকিন’ বা সত্যজ্ঞান। প্রিয় নবী (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন, “দ্বিনি জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ।” নবীজীর নেতৃত্বে দারুল আরকাম, সাহাবীদের শিক্ষণ ও যুদ্ধবন্দিদের শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষা বিস্তারের প্রাথমিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

ইতিহাস সাক্ষী যে, মুসলিম মনীষীগণ যেমন—আল-বিরুনি, ইবনু সিনা, আল ফারাবি, ওমর খৈয়াম, আল খাওয়ারিজমি—জ্ঞান ও বিজ্ঞানকে সমাজে বিস্তৃত করেছেন। কোরআনের ৭৫৬টি আয়াত জ্ঞানের গুরুত্ব প্রতিফলিত করে। আল্লাহ বলেছেন, “নিশ্চয়ই জ্ঞানীগণই আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করে” (সুরা ফাতির, আয়াত ২৮)। প্রকৃত জ্ঞান মানুষকে মুত্তাকি করে এবং তা মানব সমাজে মর্যাদা ও সম্মান বয়ে আনে।

শিক্ষকের ভূমিকা কেবল পাঠদান নয়, বরং মানব গড়ার কারিগর হিসেবে সমাজকে আলোকিত করা। নবীজী (সা.) বলেছেন, “সর্বোত্তম দান হলো কোনো মুসলমান নিজে কোনো বিষয়ে জ্ঞানার্জন করে পরে তা অপর মুসলমানকে শিক্ষা দেয়” (ইবনে মাজাহ)। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েই সওয়াবের অধিকারী। শিক্ষার সঠিক ব্যবহার না হলে তা কল্যাণকর হয় না; প্রকৃত জ্ঞানী সে, যিনি জানার সাথে সাথে আমল করেন।

আজও শিক্ষার প্রতি প্রিয় নবীর (সা.) বার্তা প্রাসঙ্গিক। স্বশিক্ষা, অর্ধশিক্ষা এবং অপশিক্ষার ফলে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, কিন্তু প্রকৃত শিক্ষকই সংস্কার ও উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি। নবীজীর সতর্কবার্তা স্মরণ করায়, “যখন সত্যপন্থী আলেম থাকবে না, তখন মূর্খরা ধর্মীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে, ফলে তারা নিজেও পথভ্রষ্ট হবে, অন্যকেও পথভ্রষ্ট করবে” (বুখারি)।

৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপিত হয়। ২০২৫ সালের ইউনেসকোর প্রতিপাদ্য—“Recasting teaching as a collaborative profession”—শিক্ষককে সহযোগী পেশা হিসেবে পুনর্গঠন। শিক্ষকতা কেবল পেশা নয়, জাতি গঠনের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। শিক্ষকরা সমাজে মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে জাতিকে দৃঢ় করে। শিক্ষকের সম্মান ও অধিকার প্রতিষ্ঠা আমাদের কর্তব্য এবং শিক্ষক দিবস এই প্রেরণার প্রতীক।

ডুয়া/নয়ন

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত