ঢাকা, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ আশ্বিন ১৪৩২
লন্ডনে এআইয়ের ঝড়: ঝুঁকিতে ১০ লাখ চাকরির ভবিষ্যৎ

প্রযুক্তি ডেস্ক: কর্মক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তনের চালিকা শক্তি হয়ে উঠছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। তবে এই রূপান্তর সবার জন্য সমান নয়। যেসব কাজ সহজে স্বয়ংক্রিয় করা সম্ভব, সেসব চাকরি সবচেয়ে ঝুঁকিতে শুধু লন্ডনেই প্রায় ১০ লাখ চাকরি পাল্টে যেতে পারে। এর মধ্যে ২ লাখ টেলিমার্কেটার, দেড় লাখ হিসাবরক্ষক এবং প্রায় এক লাখ ডেটা এন্ট্রি বিশেষজ্ঞ সরাসরি প্রভাবিত হওয়ার শঙ্কায় আছেন।
এই তালিকায় ফাস্ট ফুড কর্মী, গুদাম শ্রমিক, খুচরা ক্যাশিয়ার, প্যারালিগ্যাল এবং প্রুফরিডারদেরও নাম রয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান লাইভক্যারিয়ার ইউকে জানিয়েছে, বিগত তিন বছরে ঝুঁকিপূর্ণ চাকরির বিজ্ঞাপন ৩৮ শতাংশ কমেছে। অর্থাৎ নিয়োগ বাজারেও এআই-এর প্রভাব ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে।
ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞ জেসমিন এসকেলেরা বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার বদলে কর্মীদের বসের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা দরকার। আলোচনায় বোঝা উচিত, কীভাবে এআই কাজে লাগিয়ে নিজেকে আরও প্রাসঙ্গিক রাখা যায়। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি ঝুঁকিতে আছেন, কারণ যেসব পেশা দ্রুত এআই দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে, সেখানে নারীদের উপস্থিতি বেশি। এসকেলেরা সতর্ক করে বলেছেন, কোম্পানিগুলো যেন এআই ব্যবহারের মাধ্যমে অজান্তেই লিঙ্গ বৈষম্য না বাড়িয়ে ফেলে।
স্বাস্থ্য খাতেও এআই-এর প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠছে। কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালে ওষুধ বিতরণে ব্যবহৃত হচ্ছে ফার্মাসিউটিক্যাল রোবট, যা এআই-এর সহায়তায় নির্ধারণ করছে কোন সময়ে কত ওষুধের চাহিদা থাকবে। যেমন শীতকালে ফ্লুর সময় শ্বাসতন্ত্রের রোগীদের জন্য কত নেবুলাইজার প্রয়োজন হবে, তা আগে থেকেই অনুমান করতে পারছে।
লুইশাম ও গ্রিনউইচ এনএইচএস ট্রাস্টের প্রধান ফার্মাসিস্ট র্যাচেল নাইট জানান, বছরে প্রায় ৪ লাখ ওষুধ তারা বিতরণ করেন। এত বিপুল তথ্য মানুষের পক্ষে বিশ্লেষণ করা কঠিন, কিন্তু এআই সহজেই তা সামলাতে পারে। এতে কাজের গতি যেমন বাড়ছে, তেমনি রোগীর সুরক্ষাও নিশ্চিত হচ্ছে। সরকারের ১০ বছরের এনএইচএস পরিকল্পনায়ও এআইকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। র্যাচেল নাইট এখন ডিজিটাল শিক্ষানবিশ কর্মসূচিতে যুক্ত হয়ে সহকর্মীদের এআই ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।
লুইশাম ও গ্রিনউইচ ট্রাস্টের ডিজিটাল স্বাস্থ্য বিভাগের নেতা জিনাব হুসেনের মতে, এআই মানুষের চাকরি কেড়ে নিতে আসেনি, বরং পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ দ্রুত শেষ করে ঝুঁকি শনাক্তে সহায়তা করবে। এতে দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক ফল আসবে।
শুধু স্বাস্থ্য নয়, ব্যবসা খাতেও এআই দ্রুত জায়গা করে নিচ্ছে। ম্যাককিনসির তথ্যমতে, মাঝারি আকারের এক-তৃতীয়াংশ প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে এআই ব্যবহার করছে। তবে এআই-সম্পর্কিত চাকরির বিজ্ঞাপন কমেছে ৩৮ শতাংশ, যা ভবিষ্যতে নতুন কর্মী নিয়োগে বড় ধরনের শূন্যতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
অ্যামাজন, জেপি মরগান, মাইক্রোসফট ও ফোর্ডসহ বিশ্বসেরা কোম্পানিগুলো মনে করছে, এআই চাকরির ধরন আমূল বদলে দেবে। ফোর্ডের প্রধান নির্বাহী জিম ফারলির আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্রে সাদা পোশাকের অর্ধেক কর্মী হয়তো এআই দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবেন।
তবে প্রযুক্তি খাত এআইকে প্রতিস্থাপক নয়, বরং সহযোগী হিসেবে দেখতে চাইছে। উদাহরণস্বরূপ, স্ন্যাপচ্যাটের মূল প্রতিষ্ঠান স্ন্যাপ রয়্যাল কলেজ অব আর্টের সঙ্গে যৌথভাবে কর্মশালা চালাচ্ছে, যেখানে তরুণরা এআই ব্যবহার করে অগমেন্টেড রিয়েলিটি ডিজাইন শিখছে। গ্রাফিক ডিজাইন শিক্ষার্থী অ্যারন বলছেন, এআই ডিজাইনারদের কাজে সহায়তা করবে, প্রতিস্থাপন নয়। যদিও তিনি চান, ভবিষ্যতে এর ব্যবহারে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন করা হোক।
স্ন্যাপের কম্পিউটার ভিশন ডিরেক্টর কিউ প্যানও মনে করেন, এআই কাজের সংখ্যা কমাবে না, বরং সৃজনশীল ধারণাগুলো দ্রুত বাস্তবে রূপ দিতে সহায়তা করবে। সব মিলিয়ে বলা যায়, এআই চাকরির সংখ্যা কমাবে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও নিশ্চিতভাবে কাজের ধরন বদলে দেবে। এখন নির্ভর করছে, কে কত দ্রুত এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- এশিয়া কাপ ২০২৫: বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান,সরাসরি দেখবেন যেভাবে
- নতুন দিগন্তে বেক্সিমকো, শেয়ারবাজারে আশার আলো
- দুই বছরের ডিভিডেন্ড পেল তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- বিএসইসি-ডিএসই’র নাকের ডগায় লোকসানি শেয়ার নিয়ে কারসাজি
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ৬ কোম্পানি
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ইবনে সিনা ফার্মা
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে শেয়ারবাজারের ৮ কোম্পানি
- চূড়ান্ত অনুমোদনের পথে ৫ কোম্পানির ডিভিডেন্ড
- দু্ই কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর: ডিএসইর সতর্কবার্তা
- ১৪ প্রতিষ্ঠান রদবদলে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা অন্ধকারে, বাড়ছে আতঙ্ক
- শেয়ারবাজার নিয়ে অর্থনীতির দুই শীর্ষ নেতার কড়া সমালোচনা
- চলতি সপ্তাহে ঘোষণা আসছে ৫ কোম্পানির ডিভিডেন্ড
- মুনাফা কমেছে জুতাশিল্পের দুই জায়ান্টের
- উদ্যোক্তা পরিচালকদের বিনিয়োগ বেড়েছে ৪ কোম্পানিতে
- আর্থিক চাপ কাটাতে ভবন বিক্রি করছে শেয়ারবাজারের দুই প্রতিষ্ঠান