ঢাকা, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২

কেন হয়েছিল জুলাই অভ্যুত্থান? মাধ্যমিকের বইয়ে উঠে এল ১১ কারণ

২০২৫ ডিসেম্বর ২৮ ২২:৩৩:৩৬

কেন হয়েছিল জুলাই অভ্যুত্থান? মাধ্যমিকের বইয়ে উঠে এল ১১ কারণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা হাতে পাবে নতুন পাঠ্যবই। জানুয়ারির শুরুতেই বই বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে। পাশাপাশি নতুন বছরের আগেই বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তকের সফটকপি অনলাইন সংস্করণে উন্মুক্ত করা হচ্ছে, যাতে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা সহজেই তা পড়তে পারেন। ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে যুক্ত করা হয়েছে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের পর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ে ব্যাপক পরিবর্তন ও পরিমার্জন আনা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিকের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ে যুক্ত হয়েছে ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শিরোনামের নতুন অধ্যায়। এই অধ্যায়ের পাঠ-১২তে ‘গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় গণঅভ্যুত্থান’ শিরোনামে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি ও ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা হয়েছে।

পাঠ্যবইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্ষমতাসীন অবস্থায় আওয়ামী লীগের সময়ে বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য ও দমনমূলক চর্চা সমাজে অসন্তোষ তৈরি করে। কেন জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল তার কারণগুলো ধারাবাহিকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে পাঠটিতে।

পাঠ্যবই অনুযায়ী, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে - সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাপ্রথা, দীর্ঘমেয়াদি ফ্যাসিবাদী শাসন ও নিপীড়ন, আন্দোলনে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড ও গণহত্যা, বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অকার্যকারিতা, সামাজিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য, জনগণের ভোটাধিকার হরণ, সুশাসন ও গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সরকারি বাহিনীর গুম-খুন ও নিপীড়ন, ব্যাপক লুটপাট ও অর্থপাচার এবং দুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা।

বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ের পাঠ-১২তে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত গণআন্দোলন ইতিহাসে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ নামে পরিচিত। সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে ৫ জুন ২০২৪ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করে। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হামলায় নারী শিক্ষার্থীসহ অনেকে আহত হন।

নারী শিক্ষার্থীদের ওপর এই হামলা দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ১৬ জুলাই সারাদেশে আন্দোলনকারীদের ওপর আবারও হামলা চালানো হয়। ওইদিন রংপুরে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ, চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের হামলায় ওয়াসিম আকরামসহ সারাদেশে ছয়জন শহিদ হন। এরপর আন্দোলন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং শিক্ষার্থী, তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষ ও সাধারণ মানুষ একত্র হয়ে নয় দফা দাবিতে রাজপথে নামে। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি শিক্ষক ও বিভিন্ন পেশাজীবীরাও আন্দোলনে যুক্ত হন।

পাঠ্যবইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, অহিংস এই গণআন্দোলন দমনে তৎকালীন সরকার সহিংস পথ বেছে নেয়। ফলে নয় দফা দাবি এক দফায় রূপ নেয়। ৩ আগস্ট ২০২৪ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। আন্দোলনে নারী শিক্ষার্থী, মাদ্রাসা ছাত্র, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শ্রমজীবী মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য।

অবশেষে এই গণআন্দোলন দমনে ব্যর্থ হয়ে ৫ আগস্ট ২০২৪ শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। অধ্যায়ের শেষাংশে ‘শেখ হাসিনার পতন ও ফ্যাসিবাদের অবসান’ শিরোনামে একটি পৃথক অনুচ্ছেদ যুক্ত করে ওই সময়ের রাজনৈতিক পরিবর্তনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়েছে।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত