ঢাকা, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২

এক আদেশে উধাও ইউনিয়ন ব্যাংকের হাজার কোটি টাকার মূলধন

২০২৫ ডিসেম্বর ২৮ ২০:৪৫:২৪

এক আদেশে উধাও ইউনিয়ন ব্যাংকের হাজার কোটি টাকার মূলধন

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি’র বিনিয়োগকারীদের জন্য নেমে এসেছে নজিরবিহীন বিপর্যয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক বিশেষ সিদ্ধান্তে ব্যাংকটির সম্পূর্ণ পরিশোধিত মূলধন বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে, যার ফলে সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক—সব শেয়ারহোল্ডারই কার্যত নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক রেজোলিউশন বিভাগ (বিআরডি) গত ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে ‘ব্যাংক রেজোলিউশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর ৩৩ ধারার ক্ষমতা প্রয়োগ করে এই আদেশ জারি করে। আদেশ অনুযায়ী ইউনিয়ন ব্যাংকের ১ হাজার ৩৬ কোটি ২৮ লাখ ৪ হাজার ৪৮০ টাকা পরিশোধিত মূলধন সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত বলে গণ্য হবে। ব্যাংক খাত পুনর্গঠন ও আমানতকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার ফলে ইউনিয়ন ব্যাংকের ইস্যুকৃত সব শেয়ার বাতিল হয়ে গেছে। এর অর্থ হলো—ব্যাংকটির শেয়ারহোল্ডাররা তাদের বিনিয়োগ করা অর্থের বিপরীতে আর কোনো মালিকানা দাবি করতে পারবেন না। একই সঙ্গে ভোটাধিকার, ডিভিডেন্ড পাওয়া কিংবা ভবিষ্যতে কোনো ধরনের আইনি দাবি জানানোর সুযোগও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আদেশটি আরও উল্লেখযোগ্য এক কারণে আলোচনায় এসেছে। আদেশে বলা হয়েছে, এটি ৫ নভেম্বর ২০২৫ তারিখ থেকে ভূতাপেক্ষভাবে কার্যকর বলে বিবেচিত হবে। ফলে আইনগতভাবে ওই সময় থেকেই ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ারগুলোর কোনো আর্থিক অস্তিত্ব ছিল না। শেয়ারবাজারে থাকা বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা শেয়ার কার্যত এখন মূল্যহীন কাগজে পরিণত হয়েছে।

রেজোলিউশন অধ্যাদেশের ৩৩(২) ধারা অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কোনো শেয়ারহোল্ডার, পাওনাদার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা কিংবা স্টক এক্সচেঞ্জের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক একক ক্ষমতায় এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে, যার মাধ্যমে ব্যাংকটির বিদ্যমান মালিকানা কাঠামো ভেঙে দিয়ে নতুন পুনর্গঠনের পথ তৈরি করা হলো।

ইউনিয়ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকের আর্থিক বিবরণী, বিধিবদ্ধ নথি ও অভ্যন্তরীণ রেকর্ডে মূলধন শূন্য করার বিষয়টি প্রতিফলিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে এই পরিবর্তন আনতে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া হওয়া থেকে রক্ষা করতে এবং আমানতকারীদের স্বার্থ বজায় রাখতে এ ধরনের রেজোলিউশন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হলেও, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একটি বড় ব্যাংকের সব শেয়ার একযোগে বাতিল হয়ে যাওয়ার ঘটনা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ও আস্থাহীনতা তৈরি করেছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

এমজে/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত