ঢাকা, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২

হাদি হ’ত্যা: ডিএমপির দাবি অস্বীকার করল মেঘালয় পুলিশ

২০২৫ ডিসেম্বর ২৮ ২৩:৩৬:৫৬


হাদি হ’ত্যা: ডিএমপির দাবি অস্বীকার করল মেঘালয় পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ঘিরে নতুন করে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) দাবি করেছে, হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম ও তার সহযোগী আলমগীর শেখ দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন। তবে বাংলাদেশের এই দাবি সরাসরি নাকচ করেছে ভারতের মেঘালয় পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। ফলে ঘটনার ১৬ দিন পরও হাদির হত্যাকারীরা আসলে কোথায় সে প্রশ্নের উত্তর অনিশ্চিতই রয়ে গেছে।

রোববার দুপুরে রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এস এন মো. নজরুল ইসলাম জানান, ফয়সাল করিম ও আলমগীর শেখ হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। তার ভাষ্য অনুযায়ী, মেঘালয় পুলিশের সঙ্গে ইনফরমাল যোগাযোগে জানা গেছে, ফয়সালকে ভারতে পালাতে সহায়তার অভিযোগে পুত্তি ও সামি নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তিনি আরও দাবি করেন, হত্যার পরপরই সন্দেহভাজনরা রাজধানী ছেড়ে পালানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। গুলির ঘটনার পর তারা পল্টনের কালভার্ট রোড এলাকা থেকে মোটরসাইকেলে করে নয়াপল্টন, শাহবাগ, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট হয়ে আগারগাঁও অতিক্রম করে মিরপুরে পৌঁছায়। সেখান থেকে তারা প্রাইভেটকারে করে আশুলিয়া ও গাজীপুর হয়ে ময়মনসিংহের দিকে রওনা হয়।

ডিএমপির দাবি অনুযায়ী, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ধারাবাজার এলাকার একটি পেট্রোল পাম্পে গাড়িটি থামে। এরপর তিনজন যুবক এসে তাদের মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায় ভুটিয়াপাড়া সীমান্ত এলাকায়। গভীর রাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তারা ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পশ্চিম গারো পাহাড় জেলার একটি পৌরসভা এলাকায় পৌঁছায়।

তবে এসব দাবির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এক প্রতিবেদনে জানায়, মেঘালয় পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা বাংলাদেশের পুলিশের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগই করা হয়নি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ফয়সাল করিম ও আলমগীর শেখ বর্তমানে মেঘালয়ে অবস্থান করছেন কিংবা সেখানে গ্রেফতার হয়েছেন এমন কোনো তথ্য বা প্রমাণ মেঘালয় পুলিশের কাছে নেই। একইভাবে পুত্তি ও সামি নামে কাউকে রাজ্যটির কোথাও শনাক্ত বা গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি বলেও জানানো হয়।

ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফও বাংলাদেশের দাবিকে ভিত্তিহীন বলে আখ্যা দিয়েছে। বিএসএফের মেঘালয় ফ্রন্টিয়ারের মহাপরিদর্শক ওপি উপাধ্যায় জানান, হালুয়াঘাট সেক্টর দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সীমান্ত পার হওয়ার কোনো প্রমাণ বা রিপোর্ট তাদের কাছে নেই।

এদিকে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, হামলার পর থেকেই সন্দেহভাজনদের ডিজিটাল ডিভাইস ট্র্যাক করা হলেও তারা নিজেরা সেই ডিভাইস বহন করছিলেন না। বিভিন্ন স্থানে ডিভাইস সচল রেখে অবস্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিভ্রান্ত করা হয়।

মেঘালয় পুলিশ ও বিএসএফের অবস্থান সম্পর্কে জানতে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করেননি। পরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, গ্রেফতার হওয়া ১১ জনের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তের ভিত্তিতেই ভারতে পালানোর তথ্য উঠে এসেছে এবং এ বিষয়ে দুই দেশের পুলিশ সমন্বয় করে কাজ করছে।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত