ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৪ আশ্বিন ১৪৩২

আলোচনায় বাজার কাঁপানো কারসাজির শেয়ার

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৯ ১৭:২২:১৫

আলোচনায় বাজার কাঁপানো কারসাজির শেয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বেশ কিছু শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে, যা বাজারজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। আলোচ্য সপ্তাহে দাম বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে এসেছে এনভয় টেক্সটাইল, শ্যামপুর সুগার, ইউসিবি ব্যাংক, টেকনো ড্রাগ, ক্রাউন সিমেন্ট, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, বিডি ফাইন্যান্স, মিডল্যান্ড ব্যাংক, সাপোর্ট ও মেট্রো স্পিনিং। এই তালিকার কয়েকটি শেয়ারের অস্বাভাবিক আচরণ বাজারের সুস্থতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।

সাপ্তাহিক দাম বৃদ্ধির কোম্পানিগুলোর মধ্যে এনভয় টেক্সটাইল, ইউসিবি ব্যাংক, টেকনো ড্রাগ, ক্রাউন সিমেন্ট, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ ও সাপোর্ট ‘এ’ ক্যাটাগরির। মিডল্যান্ড ব্যাংক ‘বি’ ক্যাটাগরির এবং বাকিগুলো—শ্যামপুর সুগার, বিডি ফাইন্যান্স ও মেট্রো স্পিনিং—‘জেড’ ক্যাটাগরির। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ারগুলোর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে, বিশেষ করে শ্যামপুর সুগার-এর আচরণ নিয়ে।

বিডি ফাইন্যান্স এবং মেট্রো স্পিনিং তাদের লোকসানের কারণে ২০২২ সাল থেকে ডিভিডেন্ড দিতে পারছে না, কিন্তু তার আগে তাদের ডিভিডেন্ড দেওয়ার ইতিহাস ছিল। তবে শ্যামপুর সুগার-এর ক্ষেত্রে চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। রাষ্ট্রায়ত্ত এই কোম্পানিটি তালিকাভুক্তির পর থেকে কোনো বছর ডিভিডেন্ড দিয়েছে, এমন তথ্য ডিএসইতে নেই। অর্থাৎ, কোম্পানিটি প্রতি বছরই লোকসান দিয়ে আসছে। তারপরও ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারটি বিদায়ী সপ্তাহে ১৬.৮৮ শতাংশ বেড়ে সর্বশেষ ২০৪ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।

লোকসানের বৃত্তে স্থায়ীভাবে বন্দী এমন কোম্পানির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি স্বাভাবিক বাজার প্রক্রিয়ায় সম্ভব নয়। যেখানে ১১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দেওয়া লাভজনক কোম্পানি স্কয়ার ফার্মার শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ২২০ টাকার নিচে, সেখানে একটি লোকসানি এবং ডিভিডেন্ড-বিহীন কোম্পানির শেয়ারের দাম এত বেড়ে যাওয়া সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক। এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি কোনোভাবেই স্বাভাবিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের প্রতিফলন নয়, বরং কারসাজিকারীদের তৎপরতার স্পষ্ট লক্ষণ।

বাজারের এই ধরনের কারসাজি প্রবণতা বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। একটি সুস্থ ও স্থিতিশীল শেয়ারবাজারের জন্য লোকসানি এবং ডিভিডেন্ড-বিহীন শেয়ারে কারসাজি বন্ধ করা জরুরি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি-এর উচিত অবিলম্বে বিষয়টি খতিয়ে দেখা এবং এর পেছনে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। অন্যথায়, বাজারের স্বাভাবিক গতি এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বাজারের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করে। এতে নতুন ও অনভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা মিথ্যা প্রলোভনে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন, যা বাজারের প্রতি তাদের আস্থাকে নষ্ট করে দেয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থা এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতা এসব কারসাজিকারীদের আরও উৎসাহিত করে। তাই শুধুমাত্র তদন্ত নয়, বরং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবি।

শেয়ারবাজারের শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য এমন অস্বাভাবিক লেনদেনের প্রতিটি ঘটনাকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত। একটি শক্তিশালী ও নির্ভরযোগ্য বাজার গড়ে তুলতে হলে শুধু নিয়ম তৈরি করাই যথেষ্ট নয়, বরং সেই নিয়মগুলো যথাযথভাবে প্রয়োগও করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে কঠোর ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে, যাতে কোনো কারসাজিকারী চক্র নিরীহ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করতে না পারে।

এএসএম/

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত