ঢাকা, রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২

তীব্র গরমে বছরে ২১ হাজার কোটি টাকা হারাচ্ছে বাংলাদেশ

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৬ ১৪:৫৬:৪০

তীব্র গরমে বছরে ২১ হাজার কোটি টাকা হারাচ্ছে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতি বছর ক্রমবর্ধমান তাপপ্রবাহের কারণে বাংলাদেশে কোটি কোটি কর্মঘণ্টা হারিয়ে যাচ্ছে, যা অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু ২০২৪ সালে তাপজনিত অসুস্থতার কারণে প্রায় ২৫ কোটি কর্মদিবস নষ্ট হয়েছে। এর অর্থনৈতিক ক্ষতি ১.৩৩ থেকে ১.৭৮ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের জিডিপির প্রায় ০.৩–০.৪ শতাংশের সমান। টাকায় এর পরিমাণ ২১ হাজার কোটিরও বেশি।

আজ মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘অ্যান আনসাসটেইনেবল লাইফ: দ্য ইমপ্যাক্ট অব হিট অন হেলথ অ্যান্ড দ্য ইকোনমি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, তাপমাত্রা যখন ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে, তখন কর্মীদের উৎপাদনশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।

গবেষণায় ১৯৭৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশের তাপমাত্রা ও আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিবর্তন বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এছাড়া ২০২৪ সালে ১৬ হাজারের বেশি মানুষের ওপর পরিচালিত দুই ধাপের জরিপের তথ্যও ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১৯৮০ সাল থেকে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ‘ফিলস লাইক টেম্পারেচার’ ৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। এর ফলে ডায়রিয়া, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, শ্বাসযন্ত্রের রোগ, ক্লান্তি এবং বিষণ্নতার মতো মানসিক সমস্যা বেড়েছে।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের ডিভিশন ডিরেক্টর জ্যাঁ পেসমে বলেন, “তীব্র গরম শুধু মৌসুমী সমস্যা নয়। এটি আমাদের স্বাস্থ্য, উৎপাদনশীলতা এবং অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলে। সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা এর ক্ষতি কমাতে পারি। সিঙ্গাপুরের উদাহরণ অনুসরণ করা যেতে পারে।”

বর্তমানে উচ্চ তাপমাত্রার ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। রাজধানী ঢাকা গরমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, যেখানে তাপসূচক জাতীয় গড়ের তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রীষ্মকালে ডায়রিয়া ও দীর্ঘস্থায়ী কাশি শীতকালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়। নারীরা তাপজনিত অসুস্থতায় বেশি ভোগেন এবং বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে বিষণ্ণতা ও উদ্বেগও বাড়ে। বিশেষ করে ৫০–৬৫ বছর বয়সীদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অপারেশনস অফিসার ইফফাত মাহমুদ বলেন, “গরমে স্বাস্থ্য সমস্যা এবং উৎপাদনশীলতা কমার মধ্যে স্পষ্ট যোগসূত্র দেখা গেছে। এটি দেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলছে।”

প্রতিবেদনে তাপপ্রবাহ ব্যবস্থাপনার জন্য বহু-খাতভিত্তিক জাতীয় প্রস্তুতি বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সক্ষমতা উন্নয়ন এবং শহরাঞ্চলে সবুজায়ন বৃদ্ধি করার সুপারিশ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ক্রমবর্ধমান গরমের ঝুঁকি থেকে জীবন ও অর্থনীতি রক্ষার জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।

এমজে

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত