আমাদের যেমন বয়স কম, দুর্নীতিও তেমন কম: হাসনাত

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন যে, নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই, প্রয়োজনে আগামীকালই নির্বাচন দেওয়া হোক। তবে নির্বাচনের আগে অবশ্যই একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে, যা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে।

শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের তুলাগাও গ্রামে অনুষ্ঠিত 'উঠানে রাজনীতি' শীর্ষক এক উঠান বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এই মন্তব্য করেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, "আপনি ঘোষণা দিন যে খেলার নিয়ম চেঞ্জ হয়েছে। এ খেলার নিয়মের একটি আইনগত ভিত্তি দিন। এরপর আপনি নির্বাচন দিন, আমরা কেউ নির্বাচিত হই বা না হই দুঃখ নেই। কিন্তু জনগণ যাকে ভোট দিবে সে নির্বাচিত হতে পারবে, এতে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না।"

তিনি আরও বলেন, "আমাদেরকে নির্বাচনের আগে ভাঙা ঘরের পরিবর্তন করতে হবে। আমরা শুধুমাত্র দারোয়ান পরিবর্তনের জন্যই কি নির্বাচন করব? আমরা ৫০ বছর দেখেছি, চুরি থামানো যায়নি, টেন্ডারবাজি থামানো যায়নি, ভোট ডাকাতি থামানো যায়নি। আমরা দারোয়ান পরিবর্তন করব একই সঙ্গে দরজাও ঠিকঠাক মতো লাগাবো। এজন্য মুখের কথা বিশ্বাস করি না, আমাদের একটি নতুন, লিখিত সংবিধান চাই।"

হাসনাত আবদুল্লাহ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে বলেন, "শোনা যাচ্ছে, আপনার (ড. ইউনূসের) অনেক উপদেষ্টা নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন, এই কথা আমরা বিশ্বাস করতে চাই না, আপনারা আমাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে জাতিকে প্রতারিত করছেন।" তিনি সতর্ক করে বলেন যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি নিজেদের স্বার্থ নিশ্চিত করে যেমন-তেমন নির্বাচন দিয়ে পালিয়ে যায়, তাহলে ছাত্রজনতা তাদের ক্ষমা করবে না।

এনসিপির এই নেতা পূর্ববর্তী সরকারের সমালোচনা করে বলেন যে, দুইবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না এমন নিয়ম তারা চান। তিনি বর্তমান সময়ে এনসিপিকে 'বাচ্চাদের দল' বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার সমালোচনা করে বলেন, "আমাদের যেমন বয়স কম, আমাদের দুর্নীতিও তেমন কম। কিন্তু আপনাদের অনেকের দুর্নীতি কোথায়, কোথায় ব্যাংক, আমাদের কাছে এ খবর আসে না? খবর কিন্তু আসে। কিন্তু দুর্নীতি করে হজম করা যাবে না।"

তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, আওয়ামী লীগের যেসব মন্ত্রী-এমপি সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়েছেন, তাদের পালানোর সাহায্য করেছে অনেক রাজনৈতিক দলের নেতারা, যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ঠিক ছিল।

নির্বাচনী ব্যবস্থার ত্রুটির কথা তুলে ধরে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, "আমরা দেখেছি ভোটের আগে নেতারা টাকা দিয়ে আপনার আমার মুখ বন্ধ করে রাখে। এটা আর আমরা হতে দেব না। সামনে যে নির্বাচন হবে, ওই নির্বাচনে আমাদের কিছু শর্ত আছে, ওই শর্তগুলোর লিখিত ভিত্তি দিতে হবে। এটাই রাষ্ট্র সংস্কার।" তিনি প্রতিজ্ঞা করার আহ্বান জানান যে, জনগণ আর তাদের টাকার কাছে বিক্রি হবে না, যারা পাঁচ বছর ধরে জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে।

দেবিদ্বার উপজেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক জামাল মোহাম্মদ কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম, এহতেশাম হক, দেবিদ্বার উপজেলা সার্চ কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।

এসপি