ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২

কে হচ্ছেন নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান?

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১১ ০৮:৫৬:৩২

কে হচ্ছেন নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নেপালে টানা দুই দিনের সহিংস বিক্ষোভে অন্তত ১৯ তরুণ-শিক্ষার্থীর প্রাণহানির পর রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় পরিবর্তন এসেছে। প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেছেন, ভেঙে গেছে মন্ত্রিসভা। সেনাবাহিনী মঙ্গলবার রাত থেকে দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে এবং সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেল তরুণ বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পরিস্থিতি শান্ত করার লক্ষ্যে।

বিক্ষোভকারীদের বিভিন্ন শাখার প্রতিনিধিরা মঙ্গলবার রাতে ভার্চুয়াল আলোচনায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেবেন একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি। আলোচনায় সবচেয়ে এগিয়ে আছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি। কাঠমান্ডুর তরুণ মেয়র বালেন্দ্র শাহও (বালেন) আলোচনায় ছিলেন, তবে প্রাধান্য পাচ্ছেন কার্কি।

কে এই সুশীলা কার্কি?

১৯৫২ সালের ৭ জুন বিরাটনগরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭৫ সালে বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৭৮ সালে ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনশাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জন করেন। লেখক, আইনশিক্ষক ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত নেপালের প্রধান বিচারপতি ছিলেন এবং ইতিহাসের প্রথম নারী হিসেবে এই পদে দায়িত্ব পালন করেন।

নারী অধিকার ও মানবাধিকারভিত্তিক সংগঠনে দীর্ঘদিন সক্রিয় কার্কি ২০০৪ সালে সাম্ভব কানুন পুরস্কারসহ একাধিক সম্মাননা পান। তবে প্রধান বিচারপতি থাকাকালেই তিনি সংসদে অভিশংসনের মুখোমুখি হন। অভিযোগ ছিল, সরকারের ক্ষমতার বাইরে গিয়ে রায় দিয়েছেন তিনি। এর আগে পুলিশের মহাপরিদর্শক নিয়োগে জ্যেষ্ঠতাকে উপেক্ষা করা অবৈধ ঘোষণা করেছিলেন। অভিশংসনের উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয় এবং ২০১৭ সালের জুনে তিনি অবসরে যান।

আরেক সম্ভাব্য মুখ বালেন

কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন্দ্র শাহও অন্তর্বর্তী সরকারের সম্ভাব্য নেতৃত্বে আলোচনায় আছেন। ৩৫ বছর বয়সী বালেন পেশায় একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। ভারতের বিশ্বেশ্বরাইয়া টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর করার পর রাজনীতিতে আসেন। এর আগে তিনি নেপালের আন্ডারগ্রাউন্ড হিপহপ অঙ্গনে পরিচিত ছিলেন, যেখানে দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে তার তীব্র কণ্ঠস্বর ছিল।

২০২২ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে কাঠমান্ডুর মেয়র নির্বাচনে ৬১ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হন তিনি। স্ত্রী সাবিনা কাফলের সঙ্গে ব্যক্তিজীবনে থাকেন বালেন, নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় থেকে নাগরিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে সরাসরি জনগণের সঙ্গে কথা বলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর ‘বালেন ফর পিএম’ দ্রুত অনলাইনে ট্রেন্ডে ওঠে।

সামনে কী?

বিশ্লেষকদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে সেনাবাহিনী ও বিক্ষোভকারীদের আলোচনায় এখন মূল দায়িত্ব সুশীলা কার্কির ওপর পড়ছে। তরুণেরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, পুরোনো রাজনৈতিক নেতাদের আর গ্রহণযোগ্যতা নেই। দুর্নীতিবিরোধী ভাবমূর্তি এবং নিরপেক্ষ অবস্থানের কারণে কার্কি আস্থা অর্জন করেছেন।

অধ্যাপক বিপিন অধিকারী মনে করেন, সংবিধান অনুযায়ী সংসদ থেকে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের পথ খোলা থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলো যদি কেবল ক্ষমতা ভাগাভাগিতে সীমাবদ্ধ থাকে, তবে সংকট কাটবে না। তরুণ প্রজন্মের দাবিগুলো আলোচনায় গুরুত্ব পেলে তবেই নেপাল এগোতে পারবে সংকট উত্তরণের পথে।

এমজে

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত