ঢাকা, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২

ট্রাইব্যুনালে রাজসাক্ষী মামুনের চাঞ্চল্যকর তথ্য

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৫ ০০:৫৫:১৮

ট্রাইব্যুনালে রাজসাক্ষী মামুনের চাঞ্চল্যকর তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ চলমান জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী হিসেবে চাঞ্চল্যকর জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুলিশ প্রশাসনে ব্যাপক অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং গোপন বৈঠকের ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন।

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেলে জেরায় এবং পুনঃজবানবন্দিতে মামুন এসব তথ্য প্রকাশ করেন।

মামুনের জবানবন্দি অনুযায়ী, তিনি আইজিপি পদে থাকা সত্ত্বেও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় অনুষ্ঠিত রাতের বেলার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে তাকে জানানো হতো না। এসব বৈঠকের তথ্য জানতে তাকে সোর্স বা গোপন সূত্রের ওপর নির্ভর করতে হতো। তিনি জানান, এই ধরনের বৈঠক তার আইজিপি হওয়ার আগেও হতো। তার অধস্তন কর্মকর্তারা এসব বৈঠকে অংশগ্রহণ করলেও, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে হওয়ার কারণে তিনি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি। অনিয়ম জানার পরেও পদত্যাগ না করার কারণ হিসেবে তিনি সুবিধাভোগী ছিলেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা অস্বীকার করেন।

সাবেক আইজিপি মামুন আরও জানান, র‌্যাবের উত্তরা ইউনিটের কম্পাউন্ডে টাস্কফোর্স ইন্টেলিজেন্স সেলের বন্দিশালাগুলো তার নির্দেশে তৈরি বা পরিচালিত হতো না। ব্যারিস্টার আরমানকে তার নির্দেশে বন্দি করা হয়েছিল—এই অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেন।

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে মামুন উল্লেখ করেন, তৎকালীন আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচনের আগের রাতে ৫০ শতাংশ ব্যালট বাক্স ভরে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন, যা তিনি সোর্স মারফত জানতে পারেন। অনিয়মের কথা জানতে পেরে তিনি অধস্তন কর্মকর্তাদের বিরত থাকতে বলেছিলেন, কিন্তু সবাই তার কথা শোনেননি।

এদিকে, তার দ্বিতীয় মেয়াদে আইজিপি হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে মামুন জানান, তিনি এই বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন না এবং তার এই অনাগ্রহের কথা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবকে মৌখিকভাবে জানিয়েছিলেন। যদিও মামলার স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী মো. আমির হোসেন এই বক্তব্যকে অসত্য বলে দাবি করেন এবং বলেন যে মামুন তদবির করে নিজের স্বার্থে মেয়াদ বৃদ্ধি করেছেন। মামুন অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে পুনঃজবানবন্দিতে মামুন জানান, জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেতে বিলম্বের কারণ জানতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান তাকে ফোন করেছিলেন। এরপর তিনি রংপুর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানতে পারেন যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদন দিতে দেরি করছে।

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে এই মামলায় মামুনও আসামি ছিলেন। কিন্তু তিনি নিজের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হিসেবে মামলার বিচারে সহায়তা করছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৩৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ আগামী ৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।

এসপি

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত