পিআর ভিত্তিক নির্বাচন ও গণভোটের দাবি ইসলামী আন্দোলনের

নিজস্ব প্রতিবেদক: আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতেই আয়োজনের দাবি জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই দাবি তুলে ধরে বলেছেন, পিআর পদ্ধতি ছাড়া শতভাগ জনমতের প্রতিফলন ঘটবে না। প্রয়োজনে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজনে সরকারকে গণভোটের ডাক দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছে দলটি।

মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ইসলামী আন্দোলনসহ সাতটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন। তিনি বলেন, দেশ ও জাতি এই মুহূর্তে একটি ক্রান্তিলগ্নে রয়েছে। তারা উপদেষ্টা মণ্ডলীকে ধন্যবাদ জানিয়ে দেশের ৫৩ বছরের রাজনৈতিক জঞ্জাল, গণতন্ত্র হত্যা এবং জনগণের প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার বিষয়টি ঐকমত্য কমিশনের জুলাই সনদে রাখার প্রশংসা করেন। তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর যে রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় ছিল, তারা কেউই গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে বা জনমতের প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি।

আশরাফ আলী আকন বলেন, গত ৫৩ বছরের জনআকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি, রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার হয়নি এবং জনমতের শতভাগ প্রতিফলন ঘটেনি। তিনি সতর্ক করেন যে, যদি গতানুগতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন করা হয়, তাহলে আগামী ৫ বছরেও এই সমস্যার সমাধান হবে না।

তিনি জানান, ৩১টি দলের মধ্যে ঐকমত্য কমিশনে ২৬টি দল পিআর পদ্ধতির পক্ষে মত দিয়েছে। এই দলগুলোর পক্ষ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে খোলামেলাভাবে বলা হয়েছে যে, দেশের দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক, মব সহিংসতা, ভোট ডাকাতি, ভোট চুরি, বাক্স ছিনতাই, দিনের ভোট রাতে হওয়া, এককভাবে নির্বাচন করা এবং ডামি প্রার্থী দেওয়ার মতো সমস্যার সমাধান পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ছাড়া সম্ভব নয়।

পৃথিবীর ৯১টি দেশে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন প্রচলিত থাকার কথা উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলনের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং জনমতের প্রতিফলনের পদ্ধতি হচ্ছে পিআর। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, যদি আগামী নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি দেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে একটি গণভোট দেওয়া হোক, যাতে জনগণই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তিনি জিয়াউর রহমান ও এরশাদের সময় গণভোটের উদাহরণ দেন। প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্যরা বিষয়টি বিচার-বিবেচনা করবেন এবং আবারও বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন।

আশরাফ আলী আকন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, কোথাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃশ্যমান উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন তোলেন যে, ৩০০ আসনে নির্বাচন হলে কীভাবে এই ব্যর্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মব ও সন্ত্রাস বন্ধ করবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, 'আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর এখনো আস্থা আসে নাই।'

তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দরকার। তিনি উল্লেখ করেন যে, ভোট পরিবর্তনশীল এবং অতীতে বিভিন্ন দলের ক্ষমতায় আসার উদাহরণ দিয়ে একটি দলকে প্রাধান্য না দেওয়ার আহ্বান জানান।

আশরাফ আলী আকন জোর দিয়ে বলেন, আগামী নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতেই হতে হবে, তবে তার আগে বিচার ও সংস্কার আবশ্যক। সংস্কার ও বিচার ছাড়া সুষ্ঠু ও সঠিক নির্বাচন হবে না, আবার পিআর পদ্ধতি ছাড়া শতভাগ জনমতের প্রতিফলন ঘটবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করছে এমন সব দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জানান। তিনি উল্লেখ করেন যে, জাতীয় পার্টিসহ দুটি দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা এবং রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ চায় না।

এসপি