ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২
রামেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকের উদ্যোগে এল ১৭ কোটি টাকার ফ্রি ওষুধ

রাজশাহীর ইন্টার্ন চিকিৎসক শীর্ষ শ্রেয়ান দেখিয়ে দিলেন—ইচ্ছাশক্তি থাকলে অসম্ভবও সম্ভব। স্ট্রোক ও হৃদরোগীদের জন্য যে ওষুধ অনেক রোগীর নাগালের বাইরে, সেটিই এবার বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থা ডিরেক্ট রিলিফ তাদের অনুদান হিসেবে দিয়েছে আড়াই হাজার ভায়াল এল্টিপ্লেস ইনজেকশন, যার বাজারমূল্য প্রায় ১৭ কোটি টাকা। গত ২৭ আগস্ট থেকে এই জীবনরক্ষাকারী ওষুধ প্রয়োগ শুরু হয়েছে।
শীর্ষ শ্রেয়ান ময়মনসিংহের সন্তান। তার বাবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। সাভারে বেড়ে ওঠা শীর্ষ ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন রাজশাহী মেডিকেল কলেজে। জুলাইয়ে এমবিবিএস শেষ করে এখন ইন্টার্নশিপ করছেন। ইন্টার্ন চিকিৎসক হয়েও তার উদ্যোগে এত বড় অনুদান আসায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গর্বিত।
এল্টিপ্লেস (Alteplase) হচ্ছে থ্রোমবোলাইটিক ওষুধ, যা রক্তনালিতে জমাট বাঁধা রক্ত গলিয়ে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ফিরিয়ে আনে। বাংলাদেশে এ ওষুধের সরবরাহ সীমিত এবং দামও আকাশচুম্বী। ৫০ মিলিগ্রামের একটি ভায়ালের দাম প্রায় ৫০ হাজার টাকা। রোগীর ওজন ৬০ কেজির বেশি হলে প্রয়োজন পড়ে দুই ভায়াল। স্ট্রোক রোগীদের ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ করতে হয় আক্রমণের সাড়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যে, আর হৃদরোগীদের জন্য সময়সীমা সাড়ে ১২ ঘণ্টা। ফলে অনেক দরিদ্র রোগী ওষুধটি কিনতে সক্ষম হন না।
শীর্ষের গবেষণার সূত্র ধরেই এসেছে এই অনুদান। এমবিবিএসের পঞ্চম বর্ষে থাকতেই তিনি যুক্ত হন ওয়ার্ল্ড স্ট্রোক অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএসও) একটি গবেষণা প্রকল্পে। তার গবেষণাপত্র পরবর্তীতে জার্নালে প্রকাশিত হয় এবং ২০২৪ সালের অক্টোবরে ‘সেরা গবেষণা’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বিষয়টি নজরে আসে ডিরেক্ট রিলিফের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ডিরেক্টর গর্ডন উইলককের। গত মার্চে তিনি শীর্ষকে ই-মেইলে জানান, রামেক হাসপাতালের সক্ষমতা থাকলে তারা এই ওষুধ সরবরাহ করতে চান।
এরপর শীর্ষ বিষয়টি তুলে ধরেন মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. আজিজুল হক আযাদের কাছে। ভার্চুয়াল বৈঠকের মাধ্যমে রামেক হাসপাতাল এবং ডিরেক্ট রিলিফের মধ্যে হয় চুক্তি। সব প্রক্রিয়া শেষে গেল ২০ আগস্ট ওষুধ ঢাকায় আসে এবং ২৫ আগস্ট রাজশাহীতে পৌঁছে।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ জানান, বুধবার থেকে বিনামূল্যে এই ওষুধ রোগীদের দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৭০ ভায়াল ব্যবহার হয়েছে। তিনি বলেন, “এটা শীর্ষর কৃতিত্ব। একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক হয়েও এত বড় কাজ করেছে, আমরা গর্বিত।”
অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ফয়সাল আলম বলেন, “শিক্ষকরা নানা ফান্ড এনেছেন, কিন্তু শিক্ষার্থী হয়ে এরকম উদ্যোগ শীর্ষ শ্রেয়ানই প্রথম দেখালেন।”
শীর্ষ নিজেও অনুপ্রাণিত। তিনি বলেন, “এল্টিপ্লেসের মতো দামি ওষুধ পেয়ে অনেক রোগীর জীবন বাঁচবে। ভবিষ্যতে আরও প্রয়োজনীয় ওষুধ আনার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব।”
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- তিন কোম্পানির কারখানা বন্ধ, ক্ষোভ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের
- আইসিবি’র বিশেষ তহবিলের মেয়াদ ২০৩২ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি
- কেয়া কসমেটিক্সের ৮ হাজার কোটি টাকা উধাও, চার ব্যাংককে তলব
- সম্ভাবনার নতুন দিগন্তে শেয়ারবাজারের খান ব্রাদার্স
- ব্লুমবার্গের টেকসই তালিকায় বাংলাদেশের ১১ তালিকাভুক্ত কোম্পানি
- মূলধন ঘাটতিতে দুই ব্রোকারেজ হাউজ, ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ
- দুই খবরে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ শেয়ারের চমক
- চলতি বছর শেয়ারবাজারে আসছে রাষ্ট্রায়াত্ব দুই প্রতিষ্ঠান
- সাকিবের মোনার্কসহ ৮ ব্রোকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ
- ২৩ আগস্ট : শেয়ারবাজারের সেরা ৮ খবর
- হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রতারণা, বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করল ডিএসই
- বিএসইসির নতুন মার্জিন বিধিমালার খসড়া অনুমোদন
- বিমা আইন সংস্কার: বিনিয়োগ ও আস্থায় নতুন দিগন্ত
- কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর: ডিএসইর সতর্কবার্তা
- শেয়ারবাজারের জন্য সুখবর: কমছে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদ