কিশোর-কিশোরীদের জন্য নিষিদ্ধ হচ্ছে ইউটিউব

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে কিশোর-কিশোরীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে অস্ট্রেলিয়া। শুরুতে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান আলফাবেটের মালিকানাধীন ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকলেও নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেই ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রক সংস্থার সুপারিশে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন থেকে ১৬ বছরের কম বয়সীরা আর ইউটিউবে নিজের নামে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে না। তবে অভিভাবক ও শিক্ষকরা শিক্ষামূলক বা নির্দিষ্ট ভিডিও দেখানোর সুযোগ পাবেন।

এক জরিপে দেখা গেছে, ৩৭ শতাংশ অপ্রাপ্তবয়স্ক ইউটিউব ব্যবহারকারী ক্ষতিকর কনটেন্টের সম্মুখীন হয়েছেন। এটি অন্য যেকোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তুলনায় সবচেয়ে উদ্বেগজনক।

এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, "আমি এই অবস্থা বন্ধ করতে চাই। আমাদের সন্তানরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর সামাজিক দায়িত্ব পালন করা উচিত।"

তিনি আরও জানান, "আমি চাই অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি অভিভাবক জানুক সরকার তাদের পাশে আছে।"

বর্তমান বিধিনিষেধের আওতা আরও বাড়াল দেশটি। এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে। যদিও ইউটিউব দাবি করছে, এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নয় বরং একটি ভিডিও হোস্টিং প্ল্যাটফর্ম। তাদের মতে, এটি মূলত টিভি স্ক্রিনেও মানসম্পন্ন কনটেন্ট দেখার একটি মাধ্যম।

অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষকেরা নিয়মিত এ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতো বিধায় এর আগে ইউটিউবকে নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হয়েছিল। তবে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ও স্ন্যাপচ্যাটের মতো অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম দাবি করে, ইউটিউবেও ব্যবহারকারীদের মধ্যে ইন্টারঅ্যাকশন এবং অ্যালগরিদম-ভিত্তিক কনটেন্ট সাজেশনের মতো ফিচার রয়েছে। এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

অস্ট্রেলিয়ান প্রাইমারি প্রিন্সিপালস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাঞ্জেলা ফ্যালকেনবার্গ বলেন, "শিক্ষকেরা শিক্ষামূলক কনটেন্ট বাছাইয়ে সব সময়ই সতর্ক ও বিচক্ষণ।"

সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান আর্কটিক উলফের প্রধান তথ্য নিরাপত্তা কর্মকর্তা অ্যাডাম ম্যারের মতে, "এআই প্রযুক্তির কারণে ভুল তথ্য আরও দ্রুত ছড়াচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ইউটিউবের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা শিশুদের সুরক্ষার জন্য জরুরি এবং প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সীমাহীন ক্ষমতার বিরুদ্ধে একটি সাহসী পদক্ষেপ।"

এদিকে এই সিদ্ধান্তের ফলে অস্ট্রেলিয়া সরকারের সঙ্গে ইউটিউবের আবারও সংঘাতের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এর আগে ২০২১ সালে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলোকে অর্থ প্রদানের বিষয়ে একটি আইন পাসের সময় গুগল হুমকি দিয়েছিল তাদের কিছু সেবা বন্ধ করে দেবে।

সম্প্রতি ইউটিউব এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা সরকারের কাছে "বৈধ প্রক্রিয়ার সুষ্ঠুতা বজায় রাখার" আহ্বান জানিয়েছে। সংবাদমাধ্যমগুলোর দাবি, ইউটিউব আদালতের আশ্রয় নেওয়ার হুমকিও দিয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিকভাবে তা নিশ্চিত করেনি।

২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে পাস হওয়া একটি আইন অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়ায় কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যদি ১৬ বছরের কম বয়সীদের নিষিদ্ধ করতে যুক্তিসঙ্গত ব্যবস্থা না নেয়, তবে তাদের সর্বোচ্চ ৪৯.৫ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার জরিমানা করা হতে পারে।

সরকার জানিয়েছে, বয়স যাচাই প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক ফলাফলের ভিত্তিতে চলতি মাসেই এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।