সাবেক আইজিপির স্বীকারোক্তি, ফাঁস হলো গোপন আটকের তথ্য

সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) প্রাক্তন মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন আদালতে স্বীকার করেছেন যে, আইনজীবী ব্যারিস্টার আরমানকে র‍্যাবের টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে গোপনে আটকে রাখার বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন। চলতি বছরের ২৪ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে দেওয়া এক জবানবন্দিতে তিনি এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেন।

তার পাঁচ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে মামুন জানান, র‍্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সময় তার পূর্বসূরি বেনজীর আহমেদ তাকে ব্যারিস্টার আরমানের বিষয়টি অবহিত করেন। পরে তৎকালীন র‍্যাব ডিরেক্টর (ইন্টেলিজেন্স) সরওয়ার বিন কাশেমও তাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

সাবেক আইজিপি আরও জানান, এসব গুম ও গোপন আটকের ঘটনা ঘটত মূলত প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিকির নির্দেশে। তিনি বলেন, "পুলিশের মহাপরিদর্শক হয়েও এসব বিষয়ে আমাকে জানানো হতো না। কখনো কখনো এসব নির্দেশ সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও আসত বলে আমি শুনেছি।"

জবানবন্দিতে তিনি উল্লেখ করেন, র‍্যাবের অধিকাংশ অভিযান গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য ও পরামর্শের ভিত্তিতে পরিচালিত হতো, যেখানে আইজিপির নির্দেশনা প্রায়ই উপেক্ষা করা হতো। তিনি স্বীকার করেন, র‍্যাবের ইন্টেলিজেন্স শাখার পরিচালক সরওয়ার বিন কাশেম, খায়রুল ইসলাম এবং মশিউর রহমানের মাধ্যমে তিনি আরও কিছু গুম ও গোপন আটকের তথ্য পেয়েছিলেন। তবে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশ থাকায় তিনি এসব বিষয়ে কোনো তদন্ত করেননি বা কোনো ব্যবস্থাও নেননি।

মামুন বলেন, ব্যারিস্টার আরমানকে কখন বা কীভাবে আটক করা হয়েছিল, তা তিনি জানতেন না। তবে বিষয়টি জানার পর তিনি তারিক সিদ্দিকির সঙ্গে যোগাযোগ করলে কোনো সাড়া পাননি।তার জবানবন্দিতে র‍্যাব কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিনের নামও উঠে আসে। মামুন বলেন, "আমি শুনেছি, গুম ও নির্যাতনের ক্ষেত্রে আলেপ উদ্দিনের বিশেষ ভূমিকা ছিল। এই কর্মকর্তা র‍্যাবের মধ্যে অপেশাদার কাজে 'বিশেষ দক্ষ' হিসেবে পরিচিত ছিলেন।"

সবশেষে, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন স্বীকার করেন যে, র‍্যাবের যেসব কর্মকাণ্ডে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে, সে সম্পর্কে তিনি অবগত থাকা সত্ত্বেও আইজিপি বা ডিজি র‍্যাব হিসেবে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি, কারণ নির্দেশনাগুলো সরাসরি গোয়েন্দা সংস্থা বা সামরিক উপদেষ্টার কাছ থেকে আসত।