ঢাকা, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২
‘জুলাইয়ে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা গৌরবজনক ছিল না’

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শহীদ আসিফ হাসান স্মরণে ‘নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ’-এ স্মরণসভা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আসিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
আজ সোমবার (২৮ জুলাই) নর্দান ইউনিভার্সিটির অডিটোরিয়ামে 'শহীদ আসিফ ও রক্তাক্ত জুলাই : প্রতিবাদের প্রতিচ্ছবি' শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শহীদ আসিফের পিতা মাহমুদ আলম এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান, নর্দান ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ সদস্য লাবিবা আব্দুল্লাহ এবং শিক্ষাবিদ ড. মীর মনজুর মাহমুদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
এদিন সকাল সাড়ে ১১টায় কোরআন তেলাওয়াত এবং জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় এই স্মরণসভা। এরপর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয় এবং জুলাই অভ্যুত্থানে নর্দানের অবদান ও শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণমূলক ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রকাশ করা হয়।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, জুলাই যোদ্ধা ও আহত শিক্ষার্থীরা স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য দেন। জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা সেবায় ভূমিকা রাখায় কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল এবং উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, মানুষ মানুষকে স্মরণ করে। যদি আমরা শহীদদের ভুলে যাই তাহলে নিজেদের পরিচয় দিব অমানুষ হিসেবে। শহীদদের মনে রাখার অর্থ হচ্ছে তাদের স্বপ্নের সাথে বেঈমানী না করা। আমি মনে করি না তাদের স্বপ্ন শুধু কোটা প্রথার বাতিলের। তাদের লক্ষ্য ছিল সুদূরপ্রসারী। এদেশের সকল ধরনের বৈষম্য, অন্যায়, অবিচার, গুম, খুনের অবসান ঘটিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন ছিল তাদের। সেটি আমরা কতটা পূরণ করতে পেরেছি।
তিনি আরও বলেন, শহীদ শব্দের একটা অর্থ হচ্ছে সাক্ষী। শহীদ আসিফসহ যারা শহীদ হয়েছেন তারা কি সাক্ষী দিয়েছেন? আমাদের দেশে একসময় আইয়ামে জাহেলিয়াত নেমে এসেছিল, এটা হচ্ছে তাদের প্রথম সাক্ষ্য। তারা রক্ত এবং প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করেছে এই আইয়ামে জাহেলিয়াতকে বাংলাদেশের মানুষ শেষ পর্যন্ত মেনে নেয়নি, এটা হচ্ছে দ্বিতীয় সাক্ষ্য। আমাদের যা ছিল তা দিয়ে আমরা লড়াই করেছি। সম্পূর্ণ নিরস্ত্র থেকে দেশের ছাত্র-জনতা মনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ও ঘৃণা নিয়ে তারা স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে লড়েছেন। এই আন্দোলনের শুরুতেই ছাত্ররা যে নামকরণ করেছে তাতে গভীর তাৎপর্য রয়েছে। এটা শুধু কোটাবিরোধী নয়, এটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন।
সলিমুল্লাহ খান বলেন, আইয়ামে জাহেলিয়াতের সময় আপনারা দেখেছেন লাশ গুম করেছে। তারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। কিন্তু তাদের বিচারের জন্য আমাদের এক বছর কেন অপেক্ষা করতে হবে। এই বিচার বিলম্বিত হওয়া একদিনও উচিত নয়। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার অনেক বেশি সময় নিচ্ছেন। তারা বিচারের উদ্যোগ নিয়েছেন ঠিকই কিন্তু তা যথাযথ মনে করি না। আরেকটা বিষয় হচ্ছে জাতিসংঘের হিসেবে শুধু জুলাই গণঅভ্যুত্থানে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে ১৪০০ জন। তার আগের ১৫ বছরে কত প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে, কত মানুষকে গুম করেছে। স্বাধীনতার পর থেকে কত প্রাণ দিয়েছে তারও হিসেব নিতে হবে এবং বিচার করতে হবে। আমাদের এ দাবি জানাতে হবে।
গুনী এই শিক্ষক বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে আমাদের নেওয়ার মতো অনেক শিক্ষা আছে। যেটাকে আপনারা জুলাই সনদ বলছেন। সে সনদ লিখেছি আমরা রক্ত দিয়েছি। এখন সেটা স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে আমাদেরই আদায় করে নেওয়ার ব্যাপার। যদি এই সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত না হয়, যদি স্বৈরাচার আবার ফিরে আসে অথবা নতুন কোনো স্বৈরাচার তৈরি হয় তাহলে জুলাই পরাজিত হবে। তাহলে জুলাই যোদ্ধাদের কাজ হচ্ছে উন্নত মম শির।
তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমাদের দেশের শিক্ষক, সাংবাদিক এবং বুদ্ধিজীবীরা যে ভূমিকা রেখেছেন, আপনারা যাই বলেন না কেন আমি ভেতর থেকে সাক্ষী আছি এটা খুব গৌরবজনক ছিল না। ছাত্ররা যেভাবে এগিয়ে এসেছে সেভাবে শিক্ষকরা এগিয়ে আসেননি। যারা এগিয়ে এসেছেন, যেসব গুনী শিক্ষক আপনারা পেয়েছেন এটা অনেকটা বিরল ঘটনার একটি।
নর্দান ইউনিভার্সিটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আজকের ঘটনার সাক্ষী হওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্যে। যারাই এই অভ্যুত্থানে প্রাণ দিয়েছে, অবদান রেখেছে প্রত্যেকের স্বীকৃতি চাই। এখানে লোভের বিষয় নাই। এটা হচ্ছে ইতিহাসের প্রতি সত্যের প্রতি অঙ্গীকারের জন্য। যে লক্ষ্যের জন্য আমরা ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন করেছিলাম। সে লক্ষ্য পূরণে ২০২৪ আমাদের মধ্যে সম্ভাবনা তৈরি করেছি। মানুষ যেন তার সম্পূর্ণ মানবিক মর্যাদা ফিরে পায় সেজন্য আমাদের ভূমিকা রাখতে হবে।
প্রধান অতিথির শহীদ আসিফ হাসানের পিতা মাহমুদ আলমের পক্ষে বক্তব্য রাখেন আসিফের ভাই রাকিব হাসান। শহীদ আসিফকে স্মরণ করায় পরিবারের পক্ষ থেকে নর্দান ইউনিভার্সিটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের স্বীকৃতি এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্রের দাবি জানান তিনি।
ট্রাস্টিজ বোর্ডের সদস্য লাবিবা আব্দুল্লাহ আমন্ত্রিত অতিথি ও আয়োজক সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক উপদেষ্টা ড. মিজানুর রহমান, রেজিস্ট্রার কমান্ডার মো. মোস্তফা শহীদ (অব.) বিএন এবং অনুষ্ঠানের আহবায়ক বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের ডিন ড. মো. মারুফ উল ইসলাম।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- ডিভিডেন্ড-ইপিএস ঘোষণার তারিখ জানাল ১৯ কোম্পানি
- এক কোম্পানির দাপটেই চাঙা শেয়ারবাজার
- শেয়ারবাজারের উত্থান কি টেকসই হবে? বিশ্লেষকরা যা বলছেন
- দ্বিতীয় প্রান্তিকের ইপিএস প্রকাশ করেছে ১৪ কোম্পানি
- ডিভিডেন্ড পেল দুই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- ২২ জুলাই : শেয়ারবাজারের সেরা ৮ খবর
- শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়ায় আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন
- সর্বোচ্চ চাহিদার শীর্ষে ৪ কোম্পানির শেয়ার
- চাহিদার তুঙ্গে ১০ কোম্পানির শেয়ার
- বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বহুজাতিক তিন কোম্পানি
- ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন বৃত্তির সাক্ষাৎকার নিয়ে নতুন নির্দেশনা
- ডিভিডেন্ড পেল দুই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- এক বহুজাতিকের ধাক্কায়ই কেঁপে উঠল শেয়ারবাজার
- যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ বাজার থেকে বাদ পড়তে পারে বাংলাদেশ
- চলতি সপ্তাহে আসছে ৬৫ প্রতিষ্ঠানের ডিভিডেন্ড-ইপিএস