ঢাকা, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২

ফেনীতে বাঁধ ভাঙন, ৩০ গ্রাম প্লাবিত

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ জুলাই ০৯ ১০:৩০:৫১
ফেনীতে বাঁধ ভাঙন, ৩০ গ্রাম প্লাবিত

ফেনীতে ভারি বর্ষণ ও ভারতের উজানের পানির ঢলে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর অন্তত ১৪টি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার ৩০টিরও বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজারো মানুষ।

জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে, দুই উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ১৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ফুলগাজীতে ৯৯টি ও পরশুরামে ৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত দেড় শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। দুর্গতদের সহায়তায় শুকনো ও রান্না করা খাবারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, মঙ্গলবার রাত ১০টায় পরশুরামের মুহুরী নদীর পানি ১৩ দশমিক ৯২ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছিল যা বিপদসীমার (১২.৫৫ মিটার) চেয়ে ১.৩৭ মিটার বেশি। সকাল ৭টায় পানির উচ্চতা ছিল ৭ মিটার। মাত্র ১৫ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ৬.৯২ মিটার বা প্রায় ২২ ফুট ১০ ইঞ্চি।

আবহাওয়া অফিস জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত) দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ফেনীতে—৪৪১ মিলিমিটার। এটি চলতি বর্ষা মৌসুমের সর্বোচ্চ।

বাঁধ ভাঙনের ফলে ফুলগাজী ও পরশুরামে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পরশুরামের জঙ্গলঘোনা, অলকা, শালধর, গদানগর, সাতকুচিয়া ও বেড়াবাড়িয়া এবং ফুলগাজীর উত্তর শ্রীপুর, দেড়পাড়া ও দৌলতপুর এলাকায় বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়েছে।

এদিকে প্লাবিত এলাকাগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। ফেনী বিদ্যুৎ বিভাগ ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জানিয়েছে, অনেক বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মিটার এবং সাব-স্টেশন পানিতে তলিয়ে গেছে। দুর্ঘটনা এড়াতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

পরশুরামের চিথলিয়ার বাসিন্দা জাকিয়া আক্তার বলেন, "রাত ৮টার দিকে পানি ঘরে ঢুকে যায়। কিছু জিনিসপত্র নিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে। গত বছরের ক্ষতি এখনো পুষিয়ে উঠতে পারিনি, এবার আবার সবকিছু ডুবে গেল।"

পাউবোর দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগ করে মির্জানগরের এক বাসিন্দা বলেন, “প্রতি বছর বাঁধের দুর্বলতা ও দায়সারা কাজের কারণে মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হয়।”

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, “মাঠপর্যায়ে থেকে আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। নতুন এলাকায় পানি ঢুকছে। মানুষজন ধীরে ধীরে আশ্রয়কেন্দ্রে আসছেন।”

ফুলগাজীর ইউএনও ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, “উপজেলায় তিনটি নদীর বাঁধের চারটি স্থানে ভাঙনের খবর পেয়েছি। শতাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছে। খাবার ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।”

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন জানান, “মুহুরী নদীর পানি এখনো বিপদসীমার ওপরে। ভারতের ত্রিপুরায় বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।”

ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। যে কেউ যেকোনো প্রয়োজনে ০১৮১৮-৪৪৪৫০০ অথবা ০১৩৩৬-৫৮৬৬৯৩ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারবেন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন
ট্যাগ: ফেনী

সর্বোচ্চ পঠিত