ঢাকা, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২

বিবিসি আই’র অনুসন্ধান: বিক্ষোভ দমনে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ জুলাই ০৯ ১০:০৯:৪২
বিবিসি আই’র অনুসন্ধান: বিক্ষোভ দমনে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা

বাংলাদেশে ২০২৩ সালে ছাত্রদের নেতৃত্বে হওয়া ব্যাপক আন্দোলন দমন অভিযানে সরাসরি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন ছিল—এমনটাই দাবি করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানী ইউনিট বিবিসি আই ইনভেস্টিগেশন।

একটি ফাঁস হওয়া ফোনালাপের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে জানানো হয়, শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা গেছে, “যেখানেই ওদের পাওয়া যাবে, গুলি করা হবে।”

বিবিসির দাবি অনুযায়ী, এই ফোনালাপ এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে চলমান মামলার গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

কী রয়েছে ফাঁস হওয়া অডিওতে?

২০২৩ সালের ১৮ জুলাই রেকর্ড হওয়া একটি ফোনালাপে শেখ হাসিনা এক শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাকে বলেন, “প্রয়োজনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে।”

তিনি নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে “প্রাণঘাতী অস্ত্র” ব্যবহারের অনুমতি দেন এবং বলেন, “তারা যেখানেই আন্দোলনকারী পাবে, গুলি করবে।”

ব্রিটেনের ফরেনসিক অডিও বিশ্লেষক সংস্থা আরসট এবং বাংলাদেশের সিআইডি অডিওটি যাচাই করে তা অবিকৃত ও নির্ভরযোগ্য বলে নিশ্চিত করেছে। ধারণা করা হচ্ছে অডিওটি বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (এনটিএমসি) রেকর্ড করেছিল। তবে কে এটি ফাঁস করেছে তা নিশ্চিত নয়।

পাঁচ আগস্টের গণহত্যা: বিবিসির অনুসন্ধান

ছাত্র আন্দোলনের চূড়ান্ত সহিংসতা ঘটে ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট যেদিন ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে কমপক্ষে ৫২ জন বিক্ষোভকারী নিহত হন। বিবিসি বলছে এ ঘটনাকে বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ পুলিশি সহিংসতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

বিবিসি বিশ্লেষণ করেছে:

৩৬ দিনের আন্দোলনের শত শত ভিডিও, ছবি ও ডকুমেন্ট

সিসিটিভি ফুটেজ, ড্রোন ভিডিও এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য

হাসপাতালের রেকর্ড এবং সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পোস্ট

নিহত আন্দোলনকারী মিরাজ হোসেনের মোবাইল ভিডিও

একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও পাওয়া গেছে নিহত আন্দোলনকারী মিরাজ হোসেনের মোবাইল ফোন থেকে যিনি গুলিবর্ষণের সময় নিজেই ভিডিও করছিলেন এবং পরে প্রাণ হারান। ভিডিওটির মেটাডেটা বিশ্লেষণে দেখা যায়, গুলি শুরু হয় দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে। এরপর প্রায় ৩০ মিনিট ধরে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়:

বিক্ষোভকারীরা পালানোর সময় পুলিশ গুলি চালাচ্ছে

আহতদের শরীরে লাথি মারছে কিছু পুলিশ

অনেকে সেনা ক্যাম্পে আশ্রয় নিচ্ছেন

রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো ড্রোন ভিডিওতেও ধরা পড়ে

সরকারি প্রতিক্রিয়া

আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র বলেছেন, অডিওটি “অবৈধ মনোভাবের প্রমাণ নয়” বরং “প্রাসঙ্গিক প্রতিক্রিয়া” ছিল। তবে বাংলাদেশ পুলিশের একজন মুখপাত্র স্বীকার করেছেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কিছু সদস্য অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে লিপ্ত হয়েছিলেন।”

ভারত ও শেখ হাসিনা

ফাঁস হওয়া অডিওটি অনুযায়ী শেখ হাসিনা ১৮ জুলাই নিজ সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ফোনালাপটি করেছিলেন।বর্তমানে তিনি ভারতে পালিয়ে আছেন। বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশে ফেরত পাঠাতে ভারতের কাছে অনুরোধ করলেও এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

মামলার অগ্রগতি

জাতিসংঘের তদন্তকারীরা বলছেন, ২০২৩ সালের আন্দোলনে অন্তত ১৪০০ মানুষ নিহত হয়েছিলেন। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা, সহিংসতা উস্কানি ও ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে বিচার চলছে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত