ঢাকা, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুকে নিয়ে ‘ফতোয়া’ দিলেন ইরানের শীর্ষ আলেম

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ জুন ৩০ ১১:৩৮:২৬
ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুকে নিয়ে ‘ফতোয়া’ দিলেন ইরানের শীর্ষ আলেম

ইরান ও ইসরায়েলের টানা ১৩ দিনের সংঘাত শেষ হলেও উত্তেজনার পারদ এখনও চরমে। সামরিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও কথার যুদ্ধে বিরতি নেই। একদিকে চলছে জয়-পরাজয়ের দাবি দাওয়া, অন্যদিকে পাল্টাপাল্টি হুমকি ও রাজনৈতিক ধর্মীয় বার্তা। এর মধ্যেই গাজায় হামলার মাত্রা আরও বাড়িয়েছে ইসরায়েল।

এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রভাবশালী শিয়া আলেম আয়াতুল্লাহ নাসির মাকারেম শিরাজী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে একটি ফতোয়া জারি করেছেন। সোমবার (৩০ জুন) ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা মেহের নিউজ এ তথ্য জানায়।

ফতোয়ায় ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুকে “আল্লাহর শত্রু” বলে অভিহিত করে মুসলিম বিশ্বকে তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান শিরাজী। তিনি বলেন, ইসলামের শীর্ষ ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধে হুমকি দিলে সেই ব্যক্তি বা সরকারও আল্লাহর শত্রু হিসেবে বিবেচিত হবে।

ফতোয়ায় আরও বলা হয়, মুসলিম রাষ্ট্র বা ব্যক্তি যদি ইসলামবিরোধীদের সহায়তা করে তাহলে সেটি ধর্মীয়ভাবে সম্পূর্ণ হারাম। শত্রুদের ভুল ও অপরাধের জন্য তাদের অনুতপ্ত করা প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব বলে মনে করেন শিরাজী।

তিনি আরও বলেন, কেউ যদি এই ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের সময় কষ্ট পায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে সে আল্লাহর পথে সংগ্রামী একজন মুজাহিদের মর্যাদা পাবে।

এদিকে আরেক শীর্ষ শিয়া আলেম আয়াতুল্লাহ হুসেইন নুরি হামেদানি বলেন, ইসলামের রাহবার তথা শীর্ষ ধর্মীয় নেতার ওপর আক্রমণ পুরো মুসলিম বিশ্বের ওপর আঘাতের শামিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তিনি বলেন, তার হাতে শুধু খুন, লুণ্ঠন ও সহিংসতার রেকর্ড রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের অপরাধকেও সমর্থন করে যাচ্ছেন।

নুরি হামেদানি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইসলামি উম্মাহর এই ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হুমকিকে ব্যর্থ করে দেবে এবং ইসলামী সমাজ আরও ঐক্যবদ্ধ হবে।

এর আগে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছিলেন, তাদের পরিকল্পনায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যা অন্তর্ভুক্ত ছিল তবে সুযোগ না পাওয়ায় তা বাস্তবায়ন হয়নি। একই সময় ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তারা খামেনির অবস্থান জানেন কিন্তু তখনই তাকে হত্যা করেননি।

উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন রাতভর ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এক সামরিক অভিযানে ইরানের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি, পরমাণু কেন্দ্র ও আবাসিক এলাকায় হামলা চালায়। এতে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, আইআরজিসি প্রধান হোসেইন সালামি, মেজর জেনারেল গোলাম আলি রশিদ এবং ১০ জন পরমাণু বিজ্ঞানীসহ প্রায় ৬০০ জন নিহত হন।

জবাবে ইরান ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস–৩’ নামে পাল্টা হামলা শুরু করে। ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে বহু স্থাপনায় আঘাত হানে।

এদিকে ২১ জুন রাতে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। জবাবে ২৩ জুন রাতে কাতার ও ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেহরান।

পরিস্থিতি যখন ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছে, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ইরান ও ইসরায়েল একটি “সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক যুদ্ধবিরতিতে” সম্মত হয়েছে। যদিও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এই দাবিকে প্রথমে অস্বীকার করেন পরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও ইরান উভয়পক্ষ যুদ্ধবিরতির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত