ঢাকা, সোমবার, ১৮ আগস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২

এনবিআরের গোয়েন্দা সেলের প্রতিবেদন

বিদেশে পাচার হওয়া ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ শনাক্ত

ডুয়া নিউজ- অর্থনীতি
২০২৫ আগস্ট ১৭ ২১:৩২:০৮
বিদেশে পাচার হওয়া ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ শনাক্ত

বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে পাচার হওয়া প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত পাঁচটি দেশের সাতটি শহরে অনুসন্ধান চালিয়ে এই তথ্য উদঘাটন করে।

রোববার (১৭ আগস্ট) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন সিআইসির মহাপরিচালক আহসান হাবিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পাচার হওয়া সম্পদের বাইরে আরও নয়টি দেশে মোট ৩৫২টি বিদেশি পাসপোর্টের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেগুলো কিছু বাংলাদেশি নাগরিক অর্থের বিনিময়ে সংগ্রহ করেছেন। দেশগুলো হলো— অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা, অস্ট্রিয়া, ডমেনিকা, গ্রেনেডা, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, নর্থ মেসিডোনিয়া, মাল্টা, সেন্ট লুসিয়া ও তুরস্ক।

আহসান হাবিব জানান, প্রাথমিকভাবে দেশে বসেই তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এরপর সরেজমিনে বিদেশে অনুসন্ধান চালিয়ে এ পর্যন্ত ৩৪৬টি সম্পত্তির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তবে এটি কেবল অনুসন্ধানের প্রাথমিক চিত্র বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, এসব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে দেশের অনুকূলে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে এবং তাদের সাজা নিশ্চিত করতে সিআইসি কাজ করছে। এ প্রক্রিয়ায় ছয়টিরও বেশি আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে।

সিআইসি মহাপরিচালক আরও জানান, শেখ হাসিনার আমলে অর্থপাচারকারীরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিবিএস ডাটাবেজ নিয়ন্ত্রণে নিজেদের লোক বসিয়ে বহু তথ্য গায়েব করে ফেলেছিল। তবে এখন মুছে ফেলা তথ্য উদ্ধারে সিআইসি দক্ষতা অর্জন করেছে। তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত যা পাওয়া গেছে, সেটি কেবল ‘টিপ অব দ্য আইসবার্গ’। আরও অনেক তথ্য সামনে আসবে।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে দুদক, সিআইসি, পুলিশের সিআইডিসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এমন দৃষ্টান্ত তৈরি করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে সম্পত্তি গড়তে না পারে।”

তিনি সিআইসিকে অনুসন্ধান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন এবং বলেন, সম্ভাব্য আরও দেশে অনুসন্ধান বিস্তৃত করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে দেশের সম্পদ ফেরাতে সবধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।

এসময় দেশের অর্থনৈতিক খাত থেকে লুটপাটকে “ভয়াবহ দেশদ্রোহিতা” হিসেবে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর দেশ গড়তে হলে অবশ্যই এসব লুটেরাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। দেশের সম্পদ কীভাবে লুটপাট হয়েছে, তা জাতির সামনে উন্মোচন করতে হবে।”

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত