ঢাকা, বুধবার, ৭ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২

ইসরায়েলি মন্ত্রী

‘ফিলিস্তিনিদের চলে যেতে বাধ্য করা হবে’

২০২৫ মে ০৭ ১৫:২৩:১০
‘ফিলিস্তিনিদের চলে যেতে বাধ্য করা হবে’

ডুয়া ডেস্ক: ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দখলদার ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালের স্মতরিচ। তিনি আরও বলেছেন, “গাজার ফিলিস্তিনি জনগণের ‘বিশাল একটি অংশকে তৃতীয় কোনো দেশে’ চলে যেতে বাধ্য করা হবে।”

ইসরায়েল গাজায় জাতিগত নির্মূলীকরণের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এমন আশঙ্কার মধ্যেই তিনি এই ঘোষণা দেন।

দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মতরিচ এই মন্তব্য করেন। এর এক দিন আগে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা ‘অপারেশন গিদিডিওন’স চ্যারিয়টস’ নামে একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করে। ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা জানান, এই পরিকল্পনায় ‘গাজা উপত্যকা দখল এবং অঞ্চলটি নিজেদের দখলে রাখা’ অন্তর্ভুক্ত।

স্থায়ীভাবে গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ইসরায়েলের এই হুমকি বিশ্বজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাজ্যের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক মন্ত্রী হামিশ ফকনার বলেছেন, “ইসরায়েলের অভিযান সম্প্রসারণের তীব্র বিরোধিতা করছি আমরা। গাজায় ভূমি দখলের যেকোনো প্রচেষ্টা অগ্রহণযোগ্য।”

এদিকে, ইসরায়েলের এই ঘোষণার পর হামাস জানিয়েছে, “তারা ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় আর আগ্রহী নয়। হামাস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ‘ক্ষুধার যুদ্ধ’ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।”

গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় ত্রাণ সরবরাহে সম্পূর্ণ অবরোধের কথা উল্লেখ করে তারা এই মন্তব্য করে।

হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাসেম নাইম বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, “যতক্ষণ গাজা উপত্যকায় ক্ষুধার যুদ্ধ এবং নিধনের যুদ্ধ চলছে, ততক্ষণ আলোচনায় অংশ নেওয়া বা নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব বিবেচনা করার কোনো মানে হয় না।”

ইসরায়েলের প্রধান সামরিক মুখপাত্র এফফি ডেফরিন বলেছেন, “পরিকল্পিত আক্রমণে ‘গাজা উপত্যকার বেশির ভাগ জনসংখ্যাকে...তাদের সুরক্ষার জন্য সরিয়ে নেওয়া হবে।”

এর আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা এক ভিডিওতে বলেছেন, “তাদের নিজেদের সুরক্ষার জন্য (গাজার) জনগণকে সরানো হবে।” তবে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।

অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপনবিষয়ক এক সম্মেলনে স্মতরিচ আরও স্পষ্ট করে বলেছেন যে, “অনেক ফিলিস্তিনিকে পুরোপুরি গাজা থেকে বিতাড়িত করা হবে। এটি ইসরায়েলের পোড়া মাটি নীতির অংশ।”

তিনি আরও বলেন, “গাজা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে, বেসামরিকদের দক্ষিণে হামাস বা সন্ত্রাসবাদমুক্ত মানবিক অঞ্চলে পাঠানো হবে এবং সেখান থেকে তারা বিপুলসংখ্যক তৃতীয় দেশে চলে যেতে শুরু করবে।”

ইসরায়েলের প্রতিবেশী মিসর ও জর্ডান তাদের ভূখণ্ডে শরণার্থীদের প্রবেশ বন্ধ করে দেবে বলে জানিয়েছে। তারা যুক্তি দিয়েছে যে, “এটি গাজার জাতিগত নির্মূলের অংশীদার হওয়ার শামিল হবে।”

এদিকে, স্মতরিচের এই ঘোষণার বিষয়ে নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইনের সহকারী অধ্যাপক ভিক্টর কাট্টান বলেছেন, “স্মতরিচ কিছুদিন ধরে একই ধরনের কথা বলছেন, তবে দেশটির সরকার যখন গাজায় আরও বেশি সৈন্য ডেকে পাঠিয়েছে তখন এটি অত্যন্ত গুরুতর।”

তিনি আরও বলেন, “বেসামরিকদের নির্বাসন এবং জোরপূর্বক স্থানান্তর রোম সংবিধি (আইসিসির প্রতিষ্ঠাতা চুক্তি) অনুযায়ী মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, এবং এটি সেটিরই স্পষ্ট আহ্বান। যদি এটি তার মন্ত্রীর অবস্থান থেকে বা মন্ত্রিসভার আলোচনার ফলস্বরূপ ঘটে থাকে, তবে এটি অত্যন্ত গুরুতর হতে পারে।”

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে