ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃ'ত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক

২০২৫ ডিসেম্বর ৩০ ১১:৫৭:০৮

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃ'ত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক

নিজস্ব প্রতিবেদক: তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম প্রতীক এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

এক শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে জাতি একজন মহান অভিভাবককে হারাল। তাঁর প্রয়াণে তিনি ব্যক্তিগতভাবে গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত বলে উল্লেখ করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বেগম খালেদা জিয়া কেবল একটি রাজনৈতিক দলের নেত্রী ছিলেন না; তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের অংশ। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম, অবদান এবং জনগণের প্রতি তাঁর গভীর সংযোগের স্বীকৃতিস্বরূপ চলতি মাসেই সরকার তাঁকে রাষ্ট্রের অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করেছিল।

শোকবার্তায় বলা হয়, বাংলাদেশে গণতন্ত্র, বহুদলীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বেগম খালেদা জিয়ার ভূমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর আপসহীন নেতৃত্ব বারবার জাতিকে গণতন্ত্রহীন অবস্থা থেকে মুক্তির অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

রাজনৈতিক মতভেদ সত্ত্বেও দেশ ও জাতির কল্যাণে তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক পথচলা, গণমুখী নেতৃত্ব এবং দৃঢ় মনোবল ভবিষ্যতেও পথনির্দেশক হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা। তাঁর মৃত্যুতে দেশ একজন অভিজ্ঞ, প্রজ্ঞাবান ও পরীক্ষিত রাজনীতিককে হারিয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

অধ্যাপক ইউনূস স্মরণ করেন, বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপির চেয়ারপারসন, যিনি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালে গৃহবধূ থেকে রাজনীতির অঙ্গনে প্রবেশ করে বেগম খালেদা জিয়ার দৃঢ় ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব স্বৈরশাসক এরশাদের দীর্ঘ নয় বছরের দুঃশাসনের পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

শোকবার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সিদ্ধান্তের কথাও তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা ও উপবৃত্তি চালুর উদ্যোগকে নারী শিক্ষার অগ্রগতিতে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

রাজনৈতিক সাফল্যের প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন অত্যন্ত সফল একজন রাজনীতিক। তিনি কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে পাঁচটি পৃথক সংসদীয় আসন থেকে এবং ২০০৮ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা তিনটি আসনেই তিনি বিজয়ী হন।

১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর অর্থনৈতিক উদারীকরণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির একটি শক্ত ভিত্তি গড়ে তুলতেও তিনি ভূমিকা রাখেন বলে শোকবার্তায় উল্লেখ করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন সংগ্রাম ও প্রতিরোধের এক অনন্য প্রতীক। তাঁর আপসহীন অবস্থান দীর্ঘ রাজনৈতিক লড়াইয়ে জাতিকে সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক সাফল্যের কারণেই বেগম খালেদা জিয়া চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হন। মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় তাঁকে ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং দীর্ঘদিন কারাবাস করতে হয়।

শোকবার্তার শেষাংশে প্রধান উপদেষ্টা বেগম খালেদা জিয়ার শোকসন্তপ্ত পরিবার ও দলের নেতাকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে জাতির এই অপূরণীয় ক্ষতির দিনে দেশবাসীকে শান্ত, সংযত ও ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানান এবং প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও প্রার্থনা করার অনুরোধ করেন।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত