ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২

ঢাবি কর্তৃপক্ষ বরাবর ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের খোলা চিঠি

২০২৫ ডিসেম্বর ২৩ ১৭:০৯:১২

ঢাবি কর্তৃপক্ষ বরাবর ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের খোলা চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজ্ঞান অনুষদের স্থগিত ভর্তি পরীক্ষার নতুন তারিখ নিয়ে তৈরি হওয়া জটিলতা নিরসনে সময়সূচি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।

খোলা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ২৭ ডিসেম্বর নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু ওই দিনই মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি)-এর ভর্তি পরীক্ষা পূর্বনির্ধারিত রয়েছে, যা ভর্তীচ্ছুদের জন্য বড় সংকট তৈরি করেছে।

এমআইএসটির ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ২৭ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এবং একই দিনে বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত আর্কিটেকচার বিভাগের ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। পরে ২৩ ডিসেম্বর এমআইএসটির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরোধে কেবল স্থাপত্য বিভাগের দ্বিতীয় পর্বের (ব্যবহারিক) পরীক্ষা একদিন পিছিয়ে ২৮ ডিসেম্বর নেওয়া হবে। তবে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং স্থাপত্য বিভাগের প্রথম পর্বের ভর্তি পরীক্ষা ২৭ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

এদিকে, ২৮ ডিসেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’ ইউনিটের (গাণিতিক ও পদার্থবিজ্ঞান অনুষদ এবং ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি) ভর্তি পরীক্ষা চারটি শিফটে সকাল ১০টা ২৫ মিনিট থেকে দুপুর ২টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণা রয়েছে। ফলে একই সময়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার মুখোমুখি হচ্ছেন ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থীরা।

চিঠিতে বলা হয়, রাজধানীর তীব্র যানজটপূর্ণ বাস্তবতায় একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে একই দিনে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে একাধিক প্রতিষ্ঠানের সময়সাপেক্ষ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এবং এরপর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের পরীক্ষায় উপস্থিত হওয়া প্রায় অসম্ভব। এ ধরনের সময়সূচি শিক্ষার্থীদের সামনে এক অবাস্তব ও নিষ্ঠুর পরিস্থিতি তৈরি করছে।

ভর্তীচ্ছুরা বলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে বহু শিক্ষার্থী চরম মানসিক চাপ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। দীর্ঘদিনের পরিশ্রম, আত্মত্যাগ ও প্রস্তুতির পর কেবল একটি তারিখের কারণে কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। চলতি বছরে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রস্তুতির সময়ও তুলনামূলকভাবে কম ছিল, যা সংকটকে আরও গভীর করেছে।

এই পরিস্থিতির প্রভাব শুধু শিক্ষার্থীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; অভিভাবকরাও তীব্র উদ্বেগ ও মানসিক চাপের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। মেধা ও যোগ্যতার যথাযথ মূল্যায়নের সুযোগ নিশ্চিত করা জরুরি বলেও এতে বলা হয়েছে।

চিঠিতে স্বীকার করা হয়, রাষ্ট্রীয় শোকের কারণে ২০ ডিসেম্বরের পরীক্ষা স্থগিত করা ছিল মানবিক ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত, যার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রশংসার দাবিদার। তবে পরবর্তী সময়ে একই দিনে নতুন তারিখ নির্ধারণের ফলে যে সমন্বয়হীন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তার দায় কোনোভাবেই ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থীদের ওপর বর্তায় না।

সবশেষে ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি মানবিক ও দূরদর্শী সিদ্ধান্তের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এমআইএসটির ভর্তি পরীক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক ২৭ ডিসেম্বরের সময়সূচি পুনর্বিবেচনা করে নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হলে হাজারো মেধাবী শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ রক্ষা পাবে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য সুযোগ নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের সহানুভূতিশীল ও দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত