ঢাকা, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি প্রস্তাবে যা আছে

২০২৫ নভেম্বর ২১ ২১:৪০:০৩

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি প্রস্তাবে যা আছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দীর্ঘস্থায়ী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনায় নীতিগত সম্মতি জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার খসড়া করা এই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে কিয়েভকে ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার আশা ত্যাগ করতে হবে এবং রাশিয়ার দখলে থাকা বিশাল ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হবে। শুক্রবার (২১ নভেম্বর ২০২৫) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এ বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনায় বসবেন জেলেনস্কি।

গাজা যুদ্ধবিরতির আদলে তৈরি এই পরিকল্পনায় রাশিয়ার বহু দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, ক্রিমিয়া, লুহান্সক, দোনেৎস্ক, খেরসন এবং জাপোরিঝিয়া অঞ্চলকে কার্যত ‘রুশ ভূখণ্ড’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। ইউক্রেনকে তাদের সংবিধান সংশোধন করে ন্যাটোতে যোগ না দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে এবং দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৬ লাখে সীমিত রাখতে হবে।

বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে, তবে তা ‘আর্টিকেল ৫’-এর মতো সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের প্রতিশ্রুতি নয়। পরিকল্পনায় আরও বলা হয়েছে, চুক্তি স্বাক্ষরের ১০০ দিনের মধ্যে ইউক্রেনে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।

রাশিয়ার জন্যও এই পরিকল্পনায় বড় ছাড় রয়েছে। মস্কোর ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ধাপে ধাপে প্রত্যাহার করা হবে এবং রাশিয়াকে জি-৮ এ ফিরিয়ে আনাসহ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে পুনরায় যুক্ত করা হবে। তবে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন পুনর্গঠনে রাশিয়ার স্থগিত সম্পদ ব্যবহার করা হবে এবং এই বিনিয়োগ থেকে অর্জিত লাভের ৫০ শতাংশ পাবে যুক্তরাষ্ট্র।

পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে একটি ‘শান্তি পরিষদ’ গঠন করা হবে, যার প্রধান থাকবেন স্বয়ং ডোনাল্ড ট্রাম্প। চুক্তি লঙ্ঘন করলে পুনরায় কঠোর নিষেধাজ্ঞার হুশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে এই প্রস্তাবে। জেলেনস্কির এই সম্মতি যুদ্ধ বন্ধে বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হলেও, ভূখণ্ড হারানো এবং ন্যাটোর স্বপ্ন ভঙ্গের বিষয়টি ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কেমন প্রভাব ফেলে, তাই এখন দেখার বিষয়।

২৮ দফাগুলো হলো:

১. ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা হবে।

২. রাশিয়া, ইউক্রেন ও ইউরোপের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ অ-আগ্রাসন চুক্তি হবে, যাতে ৩০ বছরের সব অনিশ্চয়তা দূর হবে।

৩. রাশিয়া প্রতিবেশী রাষ্ট্রে আক্রমণ করবে না এবং ন্যাটোও আর সম্প্রসারিত হবে না।

৪. যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাশিয়া–ন্যাটো নিরাপত্তা বিষয়ক সংলাপ হবে, যা বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াবে।

৫. ইউক্রেন নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পাবে; বিষয়টি প্রথমবার যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে বিবেচনায় নিয়েছে।

৬. ইউক্রেনের সেনা সদস্য সংখ্যা ৬ লাখে সীমাবদ্ধ থাকবে (বর্তমানে ৮–৮.৫ লাখ)।

৭. সংবিধানে উল্লেখ থাকবে—ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেবে না; ন্যাটোও ইউক্রেনকে ভবিষ্যতে সদস্য করবে না।

৮. ন্যাটো ইউক্রেনে কোনো সেনা মোতায়েন করবে না।

৯. ইউরোপীয় যুদ্ধবিমান পোল্যান্ডে অবস্থান করবে।

১০. নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষতিপূরণ পাবে; ইউক্রেন রাশিয়ায় হামলা চালালে নিশ্চয়তা হারাবে।

১১. ইউক্রেন ইইউ সদস্য হওয়ার যোগ্যতা ধরে রাখবে এবং স্বল্পমেয়াদে ইউরোপীয় বাজারে অগ্রাধিকার পাবে।

১২. ইউক্রেন পুনর্গঠনে একটি বড় আন্তর্জাতিক উদ্যোগ নেওয়া হবে; প্রযুক্তি, এআই, অবকাঠামোয় বড় বিনিয়োগ আসবে।

১৩. রাশিয়াকে ধীরে ধীরে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ফিরিয়ে আনা হবে; যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক চুক্তিতে যাবে।

১৪. ইউক্রেন পুনর্গঠনে রাশিয়ার স্থগিত ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে; এর অর্ধেক লাভ পাবে যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপও আরও ১০০ বিলিয়ন দেবে।

১৫. নিরাপত্তা ধারাগুলোর বাস্তবায়নে মার্কিন–রুশ যৌথ কর্মদল থাকবে।

১৬. রাশিয়া আইন করে অ-আগ্রাসন নীতি অন্তর্ভুক্ত করবে।

১৭. যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিগুলোর মেয়াদ বাড়াবে (স্টার্ট-১সহ)।

১৮. ইউক্রেন এনপিটি অনুযায়ী পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করবে।

১৯. জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্র আইএইএ পর্যবেক্ষণে চালু হবে; বিদ্যুৎ উভয় দেশ সমানভাবে ভাগ করবে।

২০. দুই দেশ শিক্ষা, সমাজ, সংস্কৃতিতে সহনশীলতা বাড়াতে কর্মসূচি নেবে; ইউক্রেন সংখ্যালঘু সুরক্ষায় ইইউ নিয়ম মানবে।

২১. ক্রিমিয়া, লুহানস্ক, দোনেৎস্কসহ কিছু অঞ্চলকে কার্যত রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। কিছু জায়গায় নিরস্ত্রীকরণমুক্ত বাফার জোন থাকবে।

২২. ভবিষ্যৎ সীমান্ত জোর করে পরিবর্তন করা হবে না; নিরাপত্তা নিশ্চয়তা এখানে প্রযোজ্য নয়।

২৩. দিনিপার নদী ও কৃষ্ণসাগর দিয়ে শস্য পরিবহনে রাশিয়া বাধা দেবে না।

২৪. যুদ্ধবন্দি, মরদেহ, আটক বেসামরিক ও জিম্মিদের জন্য মানবিক কমিটি গঠন হবে।

২৫. ইউক্রেন ১০০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবে।

২৬. যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ সাধারণ ক্ষমা পাবে; ভবিষ্যতে কেউ অভিযোগ আনতে পারবে না।

২৭. এই চুক্তি আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি করবে; বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করবে শান্তি পরিষদ, যার প্রধান হবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

২৮. সব পক্ষ সম্মত হলে যুদ্ধবিরতি সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হবে।

এসপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত