ঢাকা, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা জরুরি

২০২৫ নভেম্বর ২১ ১৬:০৯:০৩

এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা জরুরি

ডুয়া ডেস্ক: এডিস মশার আগমন বাংলাদেশের জন্য নতুন কিছু নয়। ঠিক কবে থেকে এ মশা দেশে প্রবেশ করেছে, তা বলা কঠিন। তবে আশির দশকে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়ার পর শহরগুলোতে প্রথম নজরে আসে এডিস মশার উপস্থিতি। তখন থেকেই মানুষ এডিস মশার কারণে হওয়া রোগ সম্পর্কে সচেতন হতে শুরু করেন। গ্রাম কিংবা শহর সবারই মশা ও মশাবাহিত রোগের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। মশা দেখলেই অনেকেই ভয়ে থাকেন, যেন ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া তাদের অপেক্ষা করছে।

মশার কামড় এড়ানো সবসময় সম্ভব নয়। ছোট্ট এ জীবের কামড়ে প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন এবং অনেকেই মারা যাচ্ছেন। চলতি বছরেও সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মুশতাক হোসেন বলেন, “ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে এডিস মশার নির্মূলের কোনো বিকল্প নেই। তবে আমরা এখনও সেই কাজ ঠিকভাবে করতে পারিনি। শুধুমাত্র কীটনাশকের ধোঁয়া ছিটিয়ে মশার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন কমিউনিটি এনগেজমেন্ট বা সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ।”

অতীতে এডিস মশা থাকলেও ডেঙ্গু টেস্টের সুযোগ কম থাকায় এর উপস্থিতি নিয়ে বেশি গবেষণা করা হয়নি। ১৯৯৮ সালে কিছু রোগীর দেহে ডেঙ্গু ভাইরাস ধরা পড়ে। ১৯৯৯ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে রাজধানীর বহু রোগীর দেহে ডেঙ্গুর জীবাণু পাওয়া যায়। ২০০০ সালের দিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়। এরপর ধীরে ধীরে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ ও ডেঙ্গু সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা শুরু হয়।

আইইডিসিআরের তথ্যানুযায়ী, দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে ২০১৯ সালে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সে বছর দেশে এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন এবং ১৭৯ জন মারা যান। এরপর ২০২৩ সালে ইতিহাসের সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। চলতি বছর এখনও প্রায় ৭৭ হাজার মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং ৩০৭ জন মারা গেছেন। যদিও ২০২৩ সালে মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ এবং মৃতের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার।

সারা বিশ্বে প্রায় ৩,৫০০ প্রজাতির মশা রয়েছে। বাংলাদেশে অ্যানোফিলিস, এডিস ও কিউলেক্স প্রজাতি বেশি ক্ষতিকর। স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া ছড়ায়, এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া ছড়ায়, আর কিউলেক্স মশার কামড়ে ফাইলেরিয়া বা গোদরোগ হয়। ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস ইজিপ্টাই ও এডিস এলবোপিকটাস জাতের মশা খালি চোখে শনাক্ত করা যায়।

ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোলের তথ্য অনুযায়ী, এডিস ইজিপ্টাই ও এডিস এলবোপিকটাস মশার দেহে সাদা-কালো ডোরাকাটা থাকে, তাই এটিকে টাইগার মশা বলা হয়। সাধারণত এটি মাঝারি আকারের, অ্যান্টেনা লোমশ এবং পুরুষ মশার অ্যান্টেনা স্ত্রী মশার চেয়ে বেশি লোমশ হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, এডিস মশা সাধারণত স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে। শহরের বাগান, পাত্র বা টবে জমে থাকা পানিতেও জন্মায়। তবে ২০১৯ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নোংরা পানিতেও বংশ বিস্তার করতে পারে। সময়ের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে এডিস মশার ধরনগত পরিবর্তন হচ্ছে। ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপ রয়েছে এবং প্রতিটি বছরের সংক্রমণ একই নাও হতে পারে। আগে শহরে সীমিত এডিস মশার প্রাদুর্ভাব এখন নগরায়নের কারণে গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে গেছে।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত