ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

বিলুপ্তির পথে শীত, ডুবতে পারে দেশের ১৮% এলাকা

২০২৫ নভেম্বর ২০ ১২:৪১:০৫

বিলুপ্তির পথে শীত, ডুবতে পারে দেশের ১৮% এলাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক :বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আগামী দশকগুলোতে আরও তীব্র হবে বলে সরকারের সদ্য প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে। ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ জলবায়ু’ শিরোনামের এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকায় গ্রীষ্মে ঘন ঘন তাপপ্রবাহ দেখা দেবে এবং বর্ষাকালে স্বাভাবিকের তুলনায় আরও বেশি বৃষ্টি হবে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ দিনের তাপমাত্রা সাড়ে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে। এমনকি শীতকাল প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে ২১০০ সালের মধ্যে।

ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে দেখা যায়, গ্রীষ্মে তাপমাত্রা কমপক্ষে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ার সম্ভাবনা ‘বাস্তবসম্মত’। মার্চ থেকে মে—বর্ষার আগের এই সময়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বেশি দেখা দেবে। বিশেষ করে ঢাকার ক্ষেত্রে প্রতিবেদনটি বলছে, প্রতি বছর রাজধানীবাসীকে অন্তত দুটি গুরুতর তাপপ্রবাহের মুখোমুখি হতে হবে—একটি বর্ষার আগে ও একটি বর্ষার পরে, অক্টোবর-নভেম্বরে।

নরওয়ের মেটিওরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের জলবায়ু বিভাগের প্রধান হ্যানস ওলাভ জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের এই ভবিষ্যৎ দৃশ্যপট ‘সবার জন্যই বাস্তবতা হয়ে দাঁড়াবে’। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও নরওয়ের মেট অফিস যৌথভাবে ২০১১ সাল থেকে এই গবেষণা পরিচালনা করছে। তাদের এটি তৃতীয় প্রতিবেদন, যেখানে ২০৪১–২০৭০ এবং ২০৭১–২১০০—এই দুই পর্যায়ে পাঁচটি আলাদা পরিস্থিতির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের মূল তথ্য তুলে ধরেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বজলুর রশিদ। তিনি জানান, ২০৭০ সালের মধ্যে দেশের পশ্চিমাঞ্চলে বর্ষার আগের তিন মাসে প্রায় ২০ দিন তাপপ্রবাহ দেখা দিতে পারে। আরও উদ্বেগের তথ্য হলো—২১০০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলে বর্ষা শুরুর আগের ৯০ দিনের অন্তত ৭০ দিনই তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের উত্তর, পশ্চিম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও উপকূলীয় অঞ্চলে শীতের অস্তিত্ব দ্রুত কমতে থাকবে। বিশ্লেষকদের মতে, ২১০০ সালের মধ্যে দেশে শীতকাল প্রায় হারিয়ে যেতে পারে, যেখানে কিছু এলাকায় ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে মাত্র এক থেকে দুই দিন শৈত্যপ্রবাহ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসেও একইভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের ৭১ শতাংশ বৃষ্টি জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে হয়। নতুন প্রতিবেদনের পূর্বাভাস, ২০৭০ সালের মধ্যে বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত আরও ১১৮ মিলিমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে—বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ও উপকূলীয় এলাকায়।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির বিষয়েও আশঙ্কাজনক তথ্য দিয়েছে প্রতিবেদনটি। বলা হয়েছে, বিশ্বের গড় বৃদ্ধির হারের তুলনায় বাংলাদেশের উপকূলে পানি বাড়বে আরও দ্রুত—প্রতি বছর প্রায় ৫.৮ মিলিমিটার পর্যন্ত। এর ফলে উপকূলীয় এলাকার ১৮ শতাংশ অঞ্চল পানির নিচে চলে যেতে পারে। ‘সবচেয়ে খারাপ’ পরিস্থিতিতে ২১০০ সালের মধ্যে সুন্দরবনের ২৩ শতাংশ, অর্থাৎ ৯১৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা পানিবন্দি হয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।

সার্বিকভাবে, প্রতিবেদনে ভবিষ্যতের জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় এখনই পরিকল্পনা, প্রস্তুতি এবং অভিযোজন কর্মকৌশল জোরদার করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

ডুয়া/নয়ন

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত