ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

শেয়ারবাজারে সরকারি কোম্পানি: ৭টি লাভজনক, ৯টি জেড ক্যাটাগরিতে

২০২৫ নভেম্বর ১৮ ০০:৩৮:৪১

শেয়ারবাজারে সরকারি কোম্পানি: ৭টি লাভজনক, ৯টি জেড ক্যাটাগরিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো আবারও বিনিয়োগকারীদের জন্য হতাশাজনক আর্থিক ফলাফল নিয়ে এসেছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের লোকসান বাড়ছে, দক্ষতা কমছে এবং কাঠামোগত দুর্বলতা প্রকট হচ্ছে, যা সামগ্রিকভাবে শেয়ারবাজারের আস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

এখন পর্যন্ত প্রকাশিত ২০টি তালিকাভুক্ত সরকারি কোম্পানির মধ্যে ১৭টির আর্থিক ফলাফল থেকে জানা যায়, মাত্র সাতটি কোম্পানি লাভজনক থাকতে পেরেছে, আর বাকি দশটিই লোকসান দেখিয়েছে—যার মধ্যে অনেকের লোকসানের পরিমাণ উদ্বেগজনক। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দক্ষ ও দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিভাজন এখন আগের চেয়েও স্পষ্ট, যা সুশাসন, ঋণের ঝুঁকি এবং বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

শেয়ারবাজারের শ্রেণিবিভাগও হতাশাজনক চিত্র তুলে ধরছে। বর্তমানে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ এবং ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি-ডেসকো-সহ মোট নয়টি তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ডিভিডেন্ড দিতে ব্যর্থ হওয়ায় "জেড" ক্যাটাগরিতে লেনদেন হচ্ছে। পাঁচটি কোম্পানি ৫ শতাংশের নিচে ডিভিডেন্ড দেওয়ায় "বি" ক্যাটাগরিতে রয়েছে, এবং মাত্র ছয়টি কোম্পানি ১০ শতাংশের উপরে ডিভিডেন্ড অফার করে "এ" ক্যাটাগরির জন্য যোগ্য হয়েছে।

তবে, এই সামগ্রিক নেতিবাচক চিত্রের মধ্যেও কিছু কোম্পানি উল্লেখযোগ্য টার্নঅ্যারাউন্ড দেখিয়েছে। পাওয়ার গ্রিড মুনাফা অর্জনের ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে, এই প্রান্তিকে ৩৬৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছে—যা গত বছরের একই সময়ের ২৫৭ কোটি টাকা লোকসানের তুলনায় অসাধারণ প্রত্যাবর্তন। কোম্পানির সেক্রেটারি জাহাঙ্গীর আজাদ জানান, বিদ্যুৎ সঞ্চালন থেকে উচ্চ রাজস্ব, ফিক্সড ডিপোজিট এবং ট্রেজারি বন্ড বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত আয় এবং মুদ্রার গতিবিধি অনুকূল থাকায় এই উন্নতি সম্ভব হয়েছে।

যমুনা অয়েল, পদ্মা অয়েল এবং মেঘনা পেট্রোলিয়াম সহ তেল বিপণনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোও শক্তিশালী ফলাফল দিয়েছে। তাদের মূল ব্যবসায়িক কার্যক্রমের চেয়ে ফিক্সড ডিপোজিট থেকে প্রাপ্ত সুদের আয়ই ছিল তাদের প্রধান চালিকাশক্তি। বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড গত বছরের ৪৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকার মুনাফার বিপরীতে ৬৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা নিট মুনাফা নিশ্চিত করে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের এক বিরল উদাহরণ তৈরি করেছে। পরিচালন অদক্ষতার জন্য প্রায়শই সমালোচিত ডেসকোও অপ্রত্যাশিতভাবে ৩২ কোটি ২৪ লাখ টাকা লোকসানের বিপরীতে ৫৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা মুনাফা দেখিয়ে টার্নঅ্যারাউন্ড করেছে। তবে বিনিয়োগকারীরা সতর্ক রয়েছেন, কারণ কয়েক বছরের আর্থিক অস্থিতিশীলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য এক প্রান্তিকের মুনাফা যথেষ্ট নয়।

অন্যদিকে, তিতাস গ্যাস, রূপালী ব্যাংক এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ- আইসিবি সহ অন্যান্য সংস্থার ভারী লোকসানের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। তিতাস গ্যাস এই প্রান্তিকে ২৪৯ কোটি টাকার লোকসান রেকর্ড করে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় লোকসান দেখিয়েছে। কোম্পানিটি ১০.১৩ শতাংশ বিশাল সিস্টেম লোকসানকে এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে, যা অনুমোদিত ২ শতাংশের অনেক বেশি। রূপালী ব্যাংক গত বছরের সামান্য মুনাফার বিপরীতে ১৬৮ কোটি টাকা লোকসানে ডুবেছে। অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো এই পতনের জন্য খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি এবং অপারেটিং খরচের বৃদ্ধিকে দায়ী করেছে।

বাজর সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সরকারের নিয়ন্ত্রণমূলক অংশীদারিত্বের কারণে ব্যাংকটির দীর্ঘস্থায়ী অব্যবস্থাপনার খরচ শেষ পর্যন্ত করদাতাদের বহন করতে হতে পারে। আইসিবি, যার একসময় শেয়ারবাজারের মেরুদণ্ড ছিল, সুদের আয়, ডিভিডেন্ড আয় এবং মূলধন লাভ হ্রাস পাওয়ায় ১৫৩ কোটি টাকা লোকসান রিপোর্ট করেছে। এছাড়া, বাংলাদেশ সার্ভিসেস, জিল বাংলা সুগার, শ্যামপুর সুগার, উসমানিয়া গ্লাস এবং ন্যাশনাল টিউবস লোকসান দেখিয়েছে, যাদের মধ্যে শেষোক্ত চারটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।

মুনাফার ফলাফল প্রকাশের পর ন্যাশনাল টিউবস, রেনউইক জগনেশ্বর, আইসিবি, জিল বাংলা সুগার, ডেসকো, পাওয়ার গ্রিড, তিতাস গ্যাস, উসমানিয়া গ্লাস এবং রূপালী ব্যাংক সহ বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম তাদের এক বছরের সর্বনিম্ন পর্যায়ে লেনদেন হয়েছে। তবে ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস ২ হাজার ৫৩০ টাকা ৯০ পয়সা নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ শেয়ার মূল্য বজায় রেখেছে। মেঘনা পেট্রোলিয়াম, পদ্মা অয়েল এবং যমুনা অয়েলও তাদের স্থিতিশীল ক্যাশ রিজার্ভ এবং সুদের আয়কে কেন্দ্র করে তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী শেয়ার মূল্য ধরে রেখেছে।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত