ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২

কমিশনের সুপারিশকে ‘জাতির সঙ্গে প্রতারণা’ বলল বাম জোট

২০২৫ অক্টোবর ৩০ ২১:১৩:৩৯

কমিশনের সুপারিশকে ‘জাতির সঙ্গে প্রতারণা’ বলল বাম জোট

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাম গণতান্ত্রিক জোট মনে করে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জুলাই সনদ বাস্তবায়নসংক্রান্ত সুপারিশ রাজনৈতিক দল ও গোটা জাতির সঙ্গে “নির্লজ্জ প্রতারণা”। জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সভায় গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জামায়াত ও কিংস পার্টিসহ কয়েকটি দলের দাবির প্রভাবে কমিশনের এই সুপারিশ জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ও অর্জনকে ধূলিসাৎ করেছে। এটি শুধু জুলাইয়ের শহীদদের সঙ্গে নয়, পুরো জাতির সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যকে বিভক্ত করার অপচেষ্টা। পাশাপাশি, এই সুপারিশ জাতীয় নির্বাচনের প্রক্রিয়াকেও ঝুঁকির মুখে ফেলেছে বলে মন্তব্য করা হয়।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাসদ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন বাম জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। সভায় উপস্থিত ছিলেন সিপিবি সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ কাফি রতন, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদ (মার্ক্সবাদী)’র কেন্দ্রীয় নেতা রাশেদ শাহরিয়ার, সমাজতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি আব্দুল আলী, কমিউনিস্ট লীগের সদস্য আব্দুস সাত্তার, বাসদের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিখিল দাস ও গণবিপ্লবী পার্টির শহীদুল ইসলাম সবুজ।

সভায় গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়, বাম জোট শুরু থেকেই স্পষ্টভাবে জানিয়েছিল শুধুমাত্র যেসব বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত হবে, সেগুলোকেই ভিত্তি করে ঐকমত্যের জুলাই সনদ প্রণীত হওয়া উচিত। অথচ ঐকমত্য কমিশন পূর্বপরিকল্পিতভাবে ভিন্নমত উপেক্ষা করে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করেছে এবং ১৭ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এতে সংবিধানের চার মূলনীতি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বেশ কিছু প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বাম জোটের দলগুলো সনদে স্বাক্ষর দেয়নি।

জোটের প্রস্তাবে আরও বলা হয়, কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সরকার “জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) আদেশ-২০২৫” নামে একটি সাংবিধানিক আদেশ জারি করবে এবং এরপর গণভোট আয়োজন করবে যা বিদ্যমান সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আগামী সংসদকে ৯ মাসের জন্য সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করার প্রস্তাবও অসাংবিধানিক ও বিপজ্জনক বলে অভিহিত করা হয়। বাম জোটের মতে, “কে এই আদেশ জারি করবে, কোন সাংবিধানিক ক্ষমতায় গণভোট আয়োজন করবে” এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই, বরং এতে সংবিধানের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।

প্রস্তাবে বলা হয়, দেশে পূর্বে অনুষ্ঠিত তিনটি গণভোটের অভিজ্ঞতা জনমনে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করেছে। তাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট নয়, বরং জাতীয় সংসদেই সর্বসম্মত প্রস্তাব গ্রহণ করে তা কার্যকর করা উচিত।

বাম জোট মনে করে, জুলাই অভ্যুত্থান ছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী গণআন্দোলনের ফল। অথচ প্রস্তাবিত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় সনদকে দায়মুক্তি দেওয়া, আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার পথ বন্ধ করা এবং ২৭০ দিনের মধ্যে অনুমোদন না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত করার বিধান সবই চরম অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী প্রবণতার প্রকাশ।

প্রস্তাবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, “অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, আইন–শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে, দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী, বেকারত্ব বাড়ছে, বিনিয়োগ থমকে গেছে।” জোটের দাবি এই সংকট নিরসনের একমাত্র পথ হলো সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা। অনির্বাচিত সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, সংকট ততই ঘনীভূত হবে বলে সতর্ক করা হয়।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত