ঢাকা, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২

বন্ধ হচ্ছে অবৈধ মোবাইল, যেভাবে যাচাই করবেন বৈধ কিনা?

২০২৫ অক্টোবর ২৯ ২২:১১:২১

বন্ধ হচ্ছে অবৈধ মোবাইল, যেভাবে যাচাই করবেন বৈধ কিনা?

প্রযুক্তি ডেস্ক: চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশে চালু হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত ‘ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার’ (এনইআইআর)— মোবাইল ফোনের জন্য জাতীয় পর্যায়ের ডেটাবেইজ। এই সিস্টেম চালুর পর অবৈধ বা আনঅফিসিয়াল পথে আসা যেকোনো ফোন দেশের নেটওয়ার্কে আর কাজ করবে না।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) জানিয়েছে, এনইআইআর চালুর মাধ্যমে দেশের সব মোবাইল ফোনের আইএমইআই (IMEI) নম্বর একক জাতীয় ডেটাবেইজে সংযুক্ত হবে। এর ফলে অবৈধভাবে আমদানিকৃত বা চোরাই পথে আসা ফোন শনাক্ত করে নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হবে।

বিদেশ থেকে ফোন আনলে বা উপহার পেলে সেটি ব্যবহারের আগে বাধ্যতামূলক নিবন্ধন করতে হবে। এজন্য ক্রয়ের বৈধ কাগজপত্র জমা দিতে হবে এবং ফোনের আইএমইআই নম্বর ডেটাবেইজে নিবন্ধন করতে হবে।

কেন চালু হচ্ছে এনইআইআর?

বিটিআরসি কর্মকর্তাদের মতে, অবৈধ মোবাইল ব্যবহারের কারণে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা। তাছাড়া, রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোবাইল ব্যবহার করে অপরাধীরা সহজেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে অপরাধ সংঘটন করছে।

এনইআইআর কার্যকর হলে এসব প্রবণতা রোধের পাশাপাশি দেশের টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক হবে শতভাগ বৈধ ও নিরাপদ। এতে যেমন সরকারের রাজস্ব বাড়বে, তেমনি সুরক্ষিত থাকবে দেশীয় মোবাইল উৎপাদন শিল্প।

১৬ ডিসেম্বরের আগে চালু থাকা ফোনের কী হবে?

বিটিআরসি জানিয়েছে, বর্তমানে নেটওয়ার্কে সক্রিয় সব মোবাইল ফোন- বৈধ বা অবৈধ- ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হয়ে যাবে।

স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আমিনুল হক বলেন, “এনইআইআর চালুর মূল উদ্দেশ্য হলো অবৈধ ও চোরাই ফোনের ব্যবহার বন্ধ করা। এর মাধ্যমে ফোন ক্লোনিং, চুরি প্রতিরোধ ও দেশীয় শিল্প সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে।”

নতুন ফোনের ক্ষেত্রে কী হবে?

১৬ ডিসেম্বরের পর নতুন যে ফোনগুলো নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে, সেগুলো প্রথমে অস্থায়ীভাবে চালু থাকবে। পরবর্তীতে এনইআইআর সিস্টেমের মাধ্যমে বৈধতা যাচাই করা হবে। ফোন বৈধ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত থেকে সচল থাকবে; আর অবৈধ হলে গ্রাহককে এসএমএসে জানানো হবে এবং একমাস সময় দেওয়া হবে। সময়সীমা শেষে অবৈধ ফোন নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

বিদেশ থেকে আনা ফোনের বিশেষ নিবন্ধন

বিদেশ থেকে ক্রয়কৃত বা উপহার পাওয়া ফোন প্রাথমিকভাবে নেটওয়ার্কে সচল থাকবে। পরে গ্রাহককে ৩০ দিনের মধ্যে অনলাইনে তথ্য জমা দিতে হবে।

এ জন্য neir.btrc.gov.bd পোর্টালে গিয়ে Special Registration সেকশনে ফোনের IMEI নম্বরসহ প্রমাণপত্র (পাসপোর্ট, ভিসা, ক্রয় রশিদ ইত্যাদি) আপলোড করতে হবে।

একজন যাত্রী বিদ্যমান ব্যাগেজ রুল অনুযায়ী নিজের ব্যবহৃত ফোন বাদে একটি ফোন বিনা শুল্কে এবং আরও একটি ফোন শুল্ক প্রদান করে আনতে পারবেন।

কিভাবে জানবেন আপনার ফোন বৈধ কিনা

ফোনের বৈধতা যাচাই করা যাবে মাত্র ৩ ধাপে:১) মোবাইল থেকে *১৬১৬১# ডায়াল করুন।২) ১৫ ডিজিটের IMEI নম্বর লিখে পাঠান।৩) ফিরতি মেসেজে জানানো হবে আপনার হ্যান্ডসেটের নিবন্ধন অবস্থা।

এছাড়া neir.btrc.gov.bd ওয়েবসাইট বা মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার থেকেও তথ্য জানা যাবে।

নতুন ফোন কেনার আগে করণীয়

নতুন ফোন কেনার আগে অবশ্যই বৈধতা যাচাই করুন।মেসেজে টাইপ করুন: KYD IMEI নম্বর এবং পাঠান ১৬০০২ নম্বরে।ফোন বৈধ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনইআইআর সিস্টেমে নিবন্ধিত হয়ে যাবে।

ফোন বিক্রি বা হস্তান্তরের আগে ‘ডি-রেজিস্ট্রেশন’ বাধ্যতামূলক

১৬ ডিসেম্বর থেকে ফোন বিক্রি বা হস্তান্তরের আগে ‘ডি-রেজিস্ট্রেশন’ করতে হবে। এটি করা যাবে Citizen Portal, MNO Portal, Mobile Apps বা ১৬১৬১# এর মাধ্যমে। গ্রাহকের NID-এর শেষ চার ডিজিট দিতে হবে এবং সিম অবশ্যই নিজের নামে নিবন্ধিত হতে হবে।

চুরি বা হারানো ফোন ব্লক ও আনলক করা যাবে সহজেই

এনইআইআর চালু হলে গ্রাহক নিজের হারানো বা চুরি হওয়া ফোন অনলাইনে ব্লক করতে পারবেন। neir.btrc.gov.bd পোর্টাল, মোবাইল অ্যাপ, বা কাস্টমার কেয়ার থেকে ফোন লক বা আনলক করা যাবে।

যাদের ইন্টারনেট নেই, তারা USSD চ্যানেল বা ১২১ নম্বরে কল করে এই সেবা নিতে পারবেন।

মোবাইল উৎপাদন, আমদানি ও বিক্রিতে নতুন নিয়ম

এনইআইআর কার্যকর হওয়ার পর উৎপাদন ও আমদানিকারকদের সব ফোনের IMEI নম্বর বিটিআরসিতে জমা দিতে হবে। তা না হলে ফোনগুলো নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে পারবে না।

ফোন বিক্রির আগে বিক্রেতাকে IMEI যাচাই করতে হবে এবং নকল বা ফেক ফোন বিক্রি করা যাবে না।

বিটিআরসি ও মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য

বুধবার রাজধানীর বিটিআরসি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, “অবৈধ ডিভাইস ও সিম থেকে দেশে ৭৩ শতাংশ ডিজিটাল জালিয়াতি ঘটে। এনইআইআর চালু হলে এটি উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।”

তিনি জানান, অবৈধ হ্যান্ডসেটের কারণে প্রতিবছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়। এনইআইআর শুধু প্রযুক্তিগত উদ্যোগ নয়, বরং এটি জাতীয় নিরাপত্তা ও গ্রাহক সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী বলেন, “এনইআইআর চালু হলে দেশীয় মোবাইল শিল্প আরও প্রতিযোগিতামূলক হবে এবং ফিচার ফোনের জায়গায় স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়বে।”

প্রত্যাশিত সুফল

সাইবার অপরাধ ও ফোন ক্লোনিং কমবে

সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে

দেশীয় মোবাইল শিল্প সুরক্ষা পাবে

চোরাই ও নকল ফোনের বাজার কমবে

গ্রাহকের নিরাপত্তা ও ট্র্যাকিং সহজ হবে

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত