ঢাকা, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০ কার্তিক ১৪৩২

গুম প্রতিরোধে আইনি নয়, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার চাই: আইন উপদেষ্টা

২০২৫ অক্টোবর ২৫ ২২:০২:০৬

গুম প্রতিরোধে আইনি নয়, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার চাই: আইন উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক: আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, গুম হলো নিকৃষ্টতম অপরাধের মধ্যে একটি এবং এর প্রতিরোধে শুধু আইন সংস্কার নয়, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারও প্রয়োজন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, অনেক প্রাণ ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ একটি পরিবর্তিত পরিবেশে রয়েছি, যা স্থায়ী করতে গুমের বিচার নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানের হোটেল আমারিতে 'এনসিওরিং জাস্টিস: দ্য রোল অব দ্য জুডিশিয়ারি ইন অ্যাড্রেসিং এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সেস' শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কর্মশালাটি গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির উদ্যোগে এবং ঢাকার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়।

অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বিচারকদের উদ্দেশ্যে বলেন, গুমের বিচার বাস্তবায়নে তাদের সাহসী ও ন্যায্য ভূমিকা অপরিহার্য। তিনি বিশ্বাস করেন, বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও দৃঢ় অবস্থানই একদিন বাংলাদেশ থেকে গুমের সংস্কৃতি নির্মূল করবে।

মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপনকালে কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিচার একটি সৃজনশীল শিল্প এবং বিচারকরা হলেন সৃজনশীল শিল্পী। তাদের শিল্পকর্মই তাদের বিচার। তিনি গুম প্রতিরোধে বিচার বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও মানবাধিকার কাঠামোর মধ্যে সমন্বিত সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ ও আধুনিক প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে বিচার বিভাগ ও তদন্ত সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি গুমের বিচার নিশ্চিতের মূল চাবিকাঠি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী জানান, গুম-সংক্রান্ত মামলাগুলোর কার্যকর তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এখন সময়ের দাবি। কমিশন বিদ্যমান আইনি কাঠামো পর্যালোচনা করে গুমসংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি, সাক্ষী সুরক্ষা ও ভুক্তভোগী পরিবারের আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের প্রস্তাব প্রস্তুত করছে।

কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন আইন ও বিচার বিভাগের সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা এবং ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান। ওয়ার্কিং সেশন পরিচালনা করেন কমিশনের সদস্য মো. সাজ্জাদ হোসেন।

আলোচনায় গুম প্রতিরোধে একটি স্থায়ী কমিশন গঠন, আইন প্রণয়ন, বিচার বিভাগের আওতায় স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা প্রতিষ্ঠা, মনিটরিং সেল গঠন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, বিচারকদের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ, ভিক্টিমদের সাইকোলজিক্যাল ও লিগ্যাল সহযোগিতা এবং আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ উঠে আসে। কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন কমিশনের সদস্য ড. নাবিলা ইদ্রিস। এতে দেশের বিভিন্ন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে কর্মরত বিচারকসহ প্রায় ৯০ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশ নেন।

এসপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত