ঢাকা, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২

শেয়ারবাজারে কারসাজির অভিযোগে এনআরবিসি ব্যাংক ও সহযোগীদের তদন্ত শুরু

২০২৫ অক্টোবর ১৯ ০৭:৪৯:১৫

শেয়ারবাজারে কারসাজির অভিযোগে এনআরবিসি ব্যাংক ও সহযোগীদের তদন্ত শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল ও এসকেএফ ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদ আহমেদ লিটনসহ তাদের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে নেমেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

শেয়ারবাজারে কারসাজি, জালিয়াতি ও কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি আগামী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকটির সহযোগী দুই প্রতিষ্ঠান— এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড ও এনআরবিসি ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে জালিয়াতি ও কারসাজির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই দুই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কীভাবে এবং কত টাকার আত্মসাত হয়েছে, তা বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি।

তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মো. কাওসার আলী, উপ-পরিচালক মো. ফয়সাল ইসলাম এবং সহকারী পরিচালক মো. ফয়সাল আহমেদ। তদন্তের বিষয়ে আভিভা ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করা হয়েছে।

এর আগে, বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে পারভেজ তমাল, রাশেদ আহমেদ লিটন এবং তাদের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে জালিয়াতি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই বিএসইসি তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়। কমিশনের মতে, শেয়ারবাজার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এই অভিযোগগুলো তদন্ত করা জরুরি। এজন্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯, বিএসইসি আইন ১৯৯৩ এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ অনুযায়ী তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বিগত সরকারের সময় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় কার্যকর ব্যবস্থা খুব কমই নেওয়া হয়েছিল। তবে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বে নতুন কমিশন অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় এনআরবিসি ব্যাংকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হলো। জানা গেছে, দুদকের মামলায় পারভেজ তমালের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে এবং তাকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদে অনুমোদন পাওয়া চতুর্থ প্রজন্মের ৯টি ব্যাংকের মধ্যে একটি হলো এনআরবিসি ব্যাংক। এসব ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতা এবং প্রবাসে ক্ষমতাসীন দলের অনুসারী ব্যক্তিরা।

চলতি বছরের ১২ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক এনআরবিসি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয়। পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার আগ পর্যন্ত ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন এসএম পারভেজ তমাল। একই প্রজন্মের অন্যান্য ব্যাংকের মধ্যে মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য এইচ. এন. আশিকুর রহমান এবং এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান।

বিএসইসি আশা করছে, এই তদন্তের মাধ্যমে এনআরবিসি ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পাবে। কমিশন বলছে, শেয়ারবাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে এই তদন্ত হবে একটি নজির।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

রাকসুতে পরাজিত প্রার্থীদের ব্যতিক্রমী আয়োজন

রাকসুতে পরাজিত প্রার্থীদের ব্যতিক্রমী আয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (রাকসু) নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীরা একটি মিলনমেলার আয়োজন করেছেন। শনিবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের... বিস্তারিত