ঢাকা, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২

ফোনবিহীন ক্লাসে চমক দেখালো অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষার্থীরা

২০২৫ অক্টোবর ১৫ ১৪:৩৩:২৬

ফোনবিহীন ক্লাসে চমক দেখালো অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষার্থীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: অস্ট্রেলিয়ার স্কুলগুলোতে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধের দুই বছর পূর্ণ হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ও সামাজিক আচরণে এর প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা একমত যে, ক্লাসরুমে ফোনের অনুপস্থিতি শিক্ষার মান ও মনোযোগ বাড়াতে সহায়তা করেছে।

মেলবোর্নের অস্ট্রেলিয়ান ক্রিশ্চিয়ান কলেজে ফোন নিষিদ্ধ করার মূল উদ্দেশ্য ছিল শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ফিরিয়ে আনা। অধ্যক্ষ ক্যালেব পিটারসন বলেন, “ফোন হাতে থাকলে শিক্ষার্থীর মন পুরোপুরি ক্লাসে থাকে না। আমরা চাইছিলাম তারা আবার শেখার পরিবেশে মনোযোগী হোক।” এখন শিক্ষার্থীদের ফোন ব্যাগ বা লকারে রাখতে হয়; হাতে ধরা পড়লে সেটি জব্দ করে দিনের শেষে ফেরত দেওয়া হয়।

ভিক্টোরিয়ার স্কুলগুলো ২০২০ সালে প্রথম ফোন নিষিদ্ধ করে, এরপর ২০২৩ সালের মধ্যে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া, তাসমানিয়া, নিউ সাউথ ওয়েলস ও দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়াও একই পদক্ষেপ নেয়। ২০২৪ সালের শুরুতে কুইন্সল্যান্ডও নীতি কার্যকর করে। শুরু থেকেই এটি অভিভাবক ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পায়। তারা বিশ্বাস করতেন, এতে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বেড়ে যাবে, সামাজিক আচরণ উন্নত হবে এবং শিক্ষকরা বেশি মনোযোগ দিয়ে পড়াতে পারবেন।

দুই বছর পর শিক্ষকরা বলছেন, ক্লাসে মনোযোগ বেড়েছে, পাঠদানের পরিবেশ উন্নত হয়েছে। বিরতির সময়ে মাঠে খেলাধুলা ও শিক্ষার্থীদের সরাসরি সামাজিক মেলামেশাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্যালেব পিটারসন বলেন, “পাঠ এখন আরও শক্তিশালী, বাধা কমেছে, বন্ধুত্ব দৃঢ় হচ্ছে।”

নিউ সাউথ ওয়েলস ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশনের জরিপে দেখা গেছে, ৯৫% প্রধান শিক্ষক এখনও নিষেধাজ্ঞার সমর্থন জানাচ্ছেন। ৮৬% বলেছেন সামাজিক মেলামেশা বেড়েছে, ৮৭% বলেছেন মনোযোগ বেড়েছে। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার গবেষণায় ৭০% শিক্ষক মনোযোগ বাড়ার কথা বলেছেন এবং ৬৪% জানিয়েছেন, ফোনজনিত সংঘাত কমেছে।

তবে সকলেই এই নীতিকে স্বাগত জানায়নি। পশ্চিম সিডনির সাবেক শিক্ষার্থী রুকাইয়া বলেন, “ফোন কেড়ে নেওয়ায় শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন হয়ে গিয়েছিল। অনেকে গোপনে ফোন ব্যবহার করার উপায় বের করেছে।” তার মতে, ফোন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার অনুভূতি দেয়, তাই হঠাৎ ব্যবহার বন্ধ বা জব্দ করা মানসিক চাপ তৈরি করেছে। তবু অনেক শিক্ষার্থী স্বীকার করেছে, ফোন না থাকায় অনলাইন প্রতারণা, হয়রানি ও গোপনে ছবি তোলার ঝুঁকি কমেছে।

মেলবোর্নের সিলেকটিভ হাই স্কুলের অধ্যক্ষ টনি মরদিনি বলেন, “ফোন নিষিদ্ধের পর মনোযোগ বেড়েছে ও সাইবার বুলিং কমেছে। তবে ফোন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণ উপকরণ ছিল, এখন বিকল্প প্রযুক্তি ও ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।”

একজন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক নিল সেলউইন বলেন, “ফোন নিষেধাজ্ঞা জনপ্রিয় হলেও এর কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা এখনও সীমিত। যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক গবেষণায় নিষিদ্ধ ও অনুমোদিত স্কুলের শিক্ষাগত ফলাফল, ঘুম, মানসিক স্বাস্থ্য বা আচরণে বড় পার্থক্য পাওয়া যায়নি।”

ক্যালেব পিটারসন বলেন, “এটি কোনো জাদুকরি সমাধান নয়। তবে শেখার পরিবেশ, বন্ধুত্ব গড়ে তোলা ও মানসিক স্বস্তি তৈরি করতে এটি কার্যকর।” শিক্ষার্থীরাও জানিয়েছে, ফোনবিহীন দিন তাদের জন্য বিরতি ও স্বস্তির অনুভূতি নিয়ে এসেছে।

এমজে

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত